বিজেপি নির্বাচনী লিফলেট, এতে সরকারের নামগুণ গাওয়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গুণের বদলে গুচ্ছের ভুলেই তা ভরা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে সুজাতা চক্রবর্তীর এই বিখ্যাত গান রয়েছে। যার প্রথম লাইনটি – ‘ভুল সবই ভুল, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল’। সেই গানে জীবনের পাতার কথা বলা হলেও বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী লিফলেটের পাতাটির দশাও ঠিক তেমনই। ইতিমধ্যেই নিচুস্তরের বিজেপি কর্মীদের মারফৎ বিলি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ওই বানান ভুলে ভরা লিফলেট। সেটি প্রকাশ হয়েছে আবার ৬, মুরলীধর সেন লেন, কলকাতা -৭৩ থেকে, অর্থাৎ বাংলায় দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের হেড কোয়ার্টার থেকেই।
প্রসঙ্গত, চার পাতার লিফলেটের একটি পাতাও বাদ যায়নি যেখানে বানান ভুল নেই। তার মধ্যে এমন কিছু ভুল রয়েছে যেগুলি হয়তো ক্লাস ওয়ানের খোকাখুকিরাও ভুল করবে না। সঙ্গে রয়েছে এমন কিছু বাংলা শব্দ যেগুলি সাধারণ ভোটারের বুঝে ওঠার বাইরে। কিছু এমন বাক্যও রয়েছে, যেগুলি পড়লেই স্পষ্ট হয়ে যাবে নির্ঘাত ওই বাক্য গঠন করতে গিয়ে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর ট্রান্সলেটর যা দেখিয়েছে তা কপি পেস্ট করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই লিফলেটের প্রথম পাতার শুরুতেই লেখা ‘নতুন ভারত নির্মাণে যুবশক্তির সদুপযোগ’। এই বাক্যটিকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুঝে নিতে হবে সমর্থকদের। এরপরেই শুরু ভুল বানান, নিলাম অর্থাৎ নিলাম হওয়া এই বানানটি লেখা হয়েছে ‘নীলাম’। তা নেওয়া অর্থেই হোক কিংবা কোনও জিনিসের নিলাম, দু’ক্ষেত্রেই বাংলা বানানের অভিধানে বানানটি ‘ন’-এ হ্রস্বই। আবার মন কি বাত অনুষ্ঠান শোনার জন্য মিস কল করতে বলা হয়েছে একটি নম্বরে। এই নম্বর বানানেও ভুল। লেখা হয়েছে ‘নমম্বরে’। নমো+নম্বরে সন্ধি হয়ে ‘নমম্বরে’ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে! লিফলেটে দেখা গেছে, ‘র্যাঙ্ক’ অর্থাৎ পদ এই বানান লেখা হয়েছে ‘র্যাংক’। এর পরই রয়েছে কালোধন। এইটুকু বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে না লিখে কালো টাকা বলাই যেতে পারত, কিন্তু না লেখা হয়েছে ‘কালোধন’।
এখানেই শেষ নয়। ৫ নং বানান ভুল ‘প্রচেষ্টাকে’ বানানের ক্ষেত্রে। মাঝে একটি স্পেস পড়ে লিফলেটে ছেপে যে বানান বেড়িয়ে এসেছে তা হয়েছে ‘প্রচে ষ্টাকে’। এরপরের বানান ভুল দেখা গেছে ‘দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি সরকার’ লাইনটিতে। এই লাইন লিখতে গিয়েও ফের স্পেসের সমস্যা। ‘হয়নি’ বানান হয়েছে ‘হয় নি’। এরপরই যেন এক নম্বর ভুলের যেন ‘রিপিট টেলিকাস্ট’। নিলাম বানান হয়েছে ‘নীলামির দ্বারা’, ‘নীলামির ফলে’ মারাত্মক ভুল। ছাড় পায়নি ‘রিয়েল এস্টেট’ বানানও। লেখা হয়েছে ‘রিয়াল স্টেট’। অনেকটা রিয়াল মাদ্রিদ, রিয়াল কাশ্মীর এবং ‘রিয়াল স্টেট’-এর মতো। ওই একই লাইনে ‘ডেভলপমেন্ট’ বানান লেখা হয়েছে ‘ডেভালাপমেন্ট’।
এমনই বানান ভুলের নজির আরও রয়েছে। যেমিন, নজিরবিহীন লিখতে গিয়েই নজির বানান ভুল। লেখা হয়েছে ‘নজীর’। লিফলেটে দেখা গেছে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কেন্দ্রীয় সরকারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বানানে ‘বেটি’ বানানটিই ভুল। লেখা হয়েছে ‘বেটী’। আবার ‘ইসু’, এই বানান ভুল ধরার জন্য কোনও ‘ইস্যু’ লাগবে না। পাশাপাশি, অসাধারণ বানান ভুলে ‘সাধারণ’ বানানটি লেখা হয়েছে ‘সধারণ’। আর সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদী লিখতে গিয়েই ভুল করে বসে আছে বিজেপি। এখানেও স্পেস না পড়ায় বানান হয়েছে ছাপা হয়েছে ‘নরেন্দ্রমোদী’।
এতো গেল বানান ভুলের মহড়া। বাক্য গঠনের ক্ষেত্রেও ভুলের নজির গড়েছে গেরুয়া শিবির। লেখা হয়েছে, ‘সারা পৃথিবীর যেখানেই আছেন ভারতীয়রা, তাদের প্রত্যেকের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা এই সরকারের প্রাথমিকতা’! সম্ভবত লিখতে চাওয়া হয়েছিল ‘সারা পৃথিবীর যেখানেই ভারতীয়রা আছেন, তাদের প্রত্যেকের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা এই সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য।’ ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানক প্রতিষ্ঠানের বিচারে ভারতের সার্বিক অবস্থানের ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে।’ এটা লেখা যেত বা লিখতে চাওয়া হয়েছিল ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের বিচারে ভারতের সার্বিক অবস্থানের ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে’। আবার ‘পিছিয়ে পড়া মানুষদের’ লিখতে গিয়ে বাংলা ও হিন্দির সংমিশ্রণে লেখা হয়েছে ‘পিছলা বর্গ’। মানে ঠিক করে বাংলা উচ্চারণ করতে না পারা দিলীপ ঘোষরা সব মিলিয়ে মিশিয়ে গুবলেট করে ফেলেছে আর কি।