বিগত ৫ বছর ধরে মোদীর শাসনকালে নোটবন্দী, জিএসটির মতো জনবিরোধী সিদ্ধান্তগুলির কারণে একাধিক বার ধাক্কা খেয়েছে দেশের অর্থনীতি। একদিকে যেমন বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম, তেমনি বেড়েছে বেকারত্বের হারও। দিল্লীর কুর্সি দখলে যে প্রতিশ্রুতি গত বার নরেন্দ্র মোদীর মূল অস্ত্র ছিল, এ বার ভোটে তা-ই গলার কাঁটা হয়ে উঠছে তাঁর সরকারের। বছরে দু’কোটি চাকরি বা নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর, বরং তাঁর জমানায় কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ। যা নিয়ে নিয়মিত তোপ দাগছেন বিরোধীরা। এবার সেই ছবি উঠে উপদেষ্টা সংস্থা অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষাতেও। ওই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, এ দেশে কাজের বাজারের অবস্থা ভয়াবহ, হতাশাজনক। এবং তার জন্য কেন্দ্রের বর্তমান নীতিই বহু অংশে দায়ী। পরিস্থিতি বদলাতে তাদের পরামর্শ, উন্নয়নের যে নীতি আঁকড়ে সরকার চলছে, তা বদলে আগে শ্রমনিবিড় কাজে জোর দিক তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোট প্রচারে গিয়ে বছরে দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির কথা নিয়মিত বলতেন মোদী। বিরোধীদের মতে, তা আসলে ‘জুমলা’ই। আর অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহরের কথায়, কাজের সুযোগ তৈরির বাগাড়ম্বর ও কর্মীদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য কমানোর কথা বলা সত্ত্বেও বাস্তব পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাঁদের রিপোর্ট বলছে, একই কাজের জন্য মহিলা কর্মীরা পুরুষদের চেয়ে ৩৪% কম বেতন পান। সংস্থার ডিরেক্টর অব পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাম্পেন্স রানু ভোগালেরও দাবি, গত কয়েক বছরে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাল বা উন্নত মানের কাজের সুযোগ তৈরি হয়নি। জানা গেছে, এই সমস্যার জন্য কেন্দ্রের বর্তমান নীতিকেই দায়ী করেছে অক্সফ্যাম। তাদের দাবি, ভারত উন্নয়নের জন্য যে মডেলের হাত ধরেছে, ত্রুটি রয়েছে তার কাঠামোতেই।
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই মোদী সরকারের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছিল সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমির একটি রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গত একবছরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৭.২ শতাংশ। অথচ গত বছর এই সময়ে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ শতাংশ। আর সময়ের নিরিখে এই বৃদ্ধিটা খুব দ্রুত গতিতেই হয়েছে। গত তিন বছরের শুধু ফেব্রুয়ারির হিসেব ধরলেই দেখা যাবে বেকারত্বের বৃদ্ধির হারটা কেমন। ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে হারটা ছিল ৫ শতাংশ। তা ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয় ৫.৯ শতাংশ। আর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৭.২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির আগের মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে বেকারত্বের হার ছিল ৭.১ শতাংশ। অন্যদিকে, দিনকয়েক আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের প্রকাশিত রিপোর্টও জানিয়েছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতে বেকারত্বের হার যে জায়গায় পৌঁছেছে, তা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল।