ছয় বছর আগে ময়দান এলাকায় ফুটপাত থেকে আড়াই বছরের এক শিশুকন্যাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সুরেশ পাশোয়ান নামে এক সহিসকে ফাঁসির আদেশ দিল আদালত। বৃহস্পতিবার ওই আদালতের মুখ্য বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল এই নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার আগে সুরেশকে কাঠগড়ায় তুলে বিচারক জানিয়ে দেন, এটি বিরলতম ঘটনা। তাই এই ফাঁসির আদেশ।
রায় ঘোষণার আগে বিচারক অপরাধীকে কাঠগড়ায় আনার নির্দেশ দেন। হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকা সুরেশকে বিচারক বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। আপনার কিছু বলার আছে?” উত্তরে ওই অপরাধী বলে, আমাকে কম সাজা দেওয়া হোক। একই বক্তব্য রাখেন সুরেশের আইনজীবী তথা কলকাতা আইনি সহায়তা কেন্দ্র থেকে নিযুক্ত কৌঁসুলি কৌশিক চৌধুরীও। অন্যদিকে, সরকারপক্ষ গোটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চরম সাজার পক্ষে সওয়াল করে। সকলের বক্তব্য শোনার পর বিচারক বলেন, ঘটনাটি বিরল থেকে বিরলতম। একজন যেভাবে একটি ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুকে পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতো সরিয়ে দিল, তা অত্যন্ত বেদনার। এই ঘটনা কোনও সুস্থ সমাজ মেনে নিতে পারে না। তাই সমস্ত কিছু বিচার বিবেচনা করে আমি আসামিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলাম।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই সকালে হেস্টিংস থানা এলাকায় ঘোড়দৌড়ের মাঠের উত্তর দিকে একটি নর্দমা থেকে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে একটি ঝুপড়িতে দিদিমার সঙ্গে থাকত সে। নাতনিকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে শিশুটির দিদিমা হেস্টিংস থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর সৈকত নিয়োগীর কাছে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়। শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত করে জানা যায়, তাকে প্রথমে ধর্ষণ, পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, শিশুটি যেখানে থাকত, ২০ জুলাই বিকেলে সুরেশ সেখানে এসে তাকে চকলেট দিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাচ্চাটির দিদিমা বাধা দেওয়ায় সে তখনকার মতো চলে যায়। ঘৌড়দৌড়ের মাঠের এক দারোয়ানও তদন্তকারী এক অফিসারকে জানিয়েছিলেন, ওই রাতে তিনি সুরেশকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। এতেই সুরেশের উপরে সন্দেহ দৃঢ় হয় তদন্তকারী অফিসারদের। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সুরেশ দেশের বাড়ি বৈশালী যাওয়ার আগে তাঁকে খুনের কথা বলে গিয়েছে। এর পরেই হেস্টিংস থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর তথাগত সাধু ও পুষ্পল ভট্টাচার্য বৈশালী থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন সুরেশকে।