সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে এতটুকুও খামতি রাখেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য্যোপাধ্যায়। তাঁর সৈনিকেরাও তাঁরই পথের পথিক। তাই প্রচারে বেরিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলুভাতে, কুমড়ো–শাক দিয়ে ডাল মেখে ভাত খেলেন গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার।
বুধবার দুপুরে মানস গোঘাট ২ নম্বর ব্লকের মান্দারণ অঞ্চলের লালুকা গ্রামে ওই এলাকায় দলীয় প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন। তখনই গ্রামবাসীরা জানান, তাঁদের একটি পাকা সেতু প্রয়োজন। কারণ দামোদর নদের ওপর যে সেতুটি রয়েছে তা অত্যন্ত নড়বড়ে। সেতু দিয়ে যাওয়া–আসা করা যায় না। অনেকে বাধ্য হয়ে সাঁতার কেটে নদী পার হন। বাকিদের ৮–১০ কিমি ঘুরে স্কুল–কলেজ–অফিস যেতে হয়। এই সেতুর ওপর দিয়ে গোঘাটের নকুণ্ডা, কোটা, পাবা, হাজিপুর, লালুকা, কাঁটালি, মান্দারণ ইত্যাদি এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। তাই এদিন বিধায়ককে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা আবেগে কেঁদে ফেলেন। তারপরেই তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে খান তিনি।
গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপবাবুর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ে লাবনী বলে, ‘বাবা সকালে চাষের কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। অন্যদিনের মতো এদিনও দুপুরে মাঠে বাবার জন্য ভাত নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন দেখি ওই এলাকা দিয়ে বিধায়ক যাচ্ছেন। বাবার জন্য ভাত এনেছি দেখে তিনি বললেন, ভাত কি শুধুই বাবার জন্য? আমি শুনে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। বাবা তখন ওনাকে ভাত খাওয়ার কথা বলেন। তিনি রাজিও হয়ে যান। তখন ওই ভাত দু’জনে ভাগ করে খান। তিনি আমাদের বাড়ির ভাত খাবেন ভাবতেও পারিনি।’
মানস জানিয়েছেন, “আমি নিজে চাষি পরিবারের ছেলে। এক সময় নিয়মিত মাঠে যেতাম। বাবার সঙ্গে লাঙল দেওয়া থেকে শুরু করে, জমিতে মই দেওয়ার কাজ সবই করেছি। বিধায়ক হওয়ার পর এখন আর মাঠে যাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই এদিন সন্দীপবাবুর মেয়ে যখন তার বাবার জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যায়, তখন অতীতের সেইসব স্মৃতি আমার মনে পড়ে যায়। আমি ওই ভাত মনের সুখে খেয়েছি। খুব তৃপ্তি পেয়েছি। খাবারের পাশাপাশি এভাবে চাষিদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিয়ে খুব ভাল লেগেছে।’ ঘটনার কথা ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। সকলেই বিধায়কের এই অভিনব তথা অমায়িক ব্যবহারের জন্য খুশি। প্রশংসাও করেছেন বিনাদ্বিধায়।
মানস আশ্বাস দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব সেতু করা হবে। সেচ দপ্তরকে বিস্তারিতভাবে জানাবেন বিষয়টি। বিধায়কের কথায় খুশি হয়ে চাষি সন্দীপ গায়েন তাঁর সঙ্গে বসে ভাত খাওয়ার অনুরোধ করেন। তখন মাঠে বসেই বিধায়ক দুপুরের খাওয়া সেরে নেন ওই চাষি পরিবারের সঙ্গে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা আপ্লুত। তাঁরা বলেন, ‘বিধায়ক যে এত কাছের মানুষ হতে পারেন তা আগে জানা ছিল না।’