‘যে বিজেপি আজ দেশজুড়ে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বিলি করছে, সেই বিজেপির পিতৃসংগঠনের ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ভূমিকা ছিল তা ন্যক্কারজনক।’ এমনই কড়া ভাষায় গতকাল বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে আক্রমণ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলওয়ামা-কাণ্ড এবং বালাকোট অভিযানের পরে দেশ জুড়ে বিজেপির তোলা ‘দেশপ্রেম’এর আবেগের মোকাবিলায় এবার এভাবেই আরএসএস-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন তিনি।
বুধবারই কালীঘাটের কার্য্যালয়ে দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে সরাসরি বিজেপি এবং সঙ্ঘের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বস্তুত, তৃণমূলের ইস্তাহারে নাম না করে আরএসএস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে মিলে যায় দেশের এক বড় অংশের ইতিহাসবিদদের মতামত। গান্ধীজির লবন সত্যাগ্রহ থেকে শুরু করে ভারত ছাড়ো আন্দোলন— কোনও আন্দোলনেই সরাসরি ভাবে যোগ দেয়নি সঙ্ঘ।
ইতিহাসবিদদের বক্তব্য, ব্রিটিশ সরকারের নথি এবং সঙ্ঘ নেতৃত্বের বিভিন্ন লেখা থেকেই স্পষ্ট, কীভাবে কর্মীদের সমস্ত আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারকে মুচলেকা দিয়ে বীর সাভারকরের আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রসঙ্গও বহু আলোচিত। আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা কে বি হেডগেওয়ার ছিলেন সাভারকর ভক্ত। ইতিহাসবিদদের অনেকেই জানাচ্ছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সঙ্ঘের আচরণ ‘সদর্থক’ ছিল না। জাতীয় পতাকা নিয়ে তাদের সমালোচনা ‘ন্যক্কারজনক’ বলেই মনে করেন অনেকে। সমালোচিত হয়েছে তাদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার ভাবনাও।
গতকাল তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারে মোদী সরকারের ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ ভাবমূর্তির কথা একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। হীরক রাজার সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা করে বলা হয়েছে, ‘হীরক রাজার দেশে আমরা দেখেছি সেখানে প্রশ্ন করার অধিকারই থাকে না প্রজাদের। নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেও আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই হীরক রাজার দেশের ছায়া নেমেছে ভারতে।’ একই সঙ্গে মানবাধিকার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অধিকার কী ভাবে বিপন্ন হচ্ছে, সে কথাও তুলে ধরা হয়েছে ইস্তেহারে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু, দলিতদের উপর আক্রমণ এবং হত্যার প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে।
এর আগেও মোদী সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মমতা বলেছেন, ভারত বৈচিত্র্যের দেশ। শাসনের ক্ষেত্রেও সেই বৈচিত্র্য মাথায় রাখা দরকার। কিন্তু মোদী সরকার দেশের সেই বৈচিত্র্যকেই অস্বীকার করছে। রাজ্যের অধিকারও খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে। গতকাল কাশ্মীর প্রসঙ্গেও নিজের মতামত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব। জঙ্গলমহল, পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছি। কাশ্মীরেও পারব।’ তাঁর প্রস্তাব, ‘আমাকে দায়িত্ব দেবেন। আমি কাশ্মীর গিয়ে থাকব। আমি সবসময় ইতিবাচক থাকি।’ মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘কেন্দ্রে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২ দিনের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা হবে।’