গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। তারপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, ভারত যদি নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিতে পারে, আমরা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সেইমতো, ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানের হাতে প্রমাণ-সহ ডসিয়ার তুলে দেওয়া হয়। পুলওয়ামা হামলার পিছনে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গী গোষ্ঠী জইশের হাত রয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে বসেই হামলার ছক করেছিল জইশ প্রধান মাসুদ আজহার। এই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ছিল ওই ডসিয়ারে। জঙ্গী শিবিরগুলির একটি তালিকাও দেয় ভারত। তাতে দাবি করা হয়েছিল, সেদেশে অন্তত ২২ টি এলাকায় জঙ্গী ঘাঁটি আছে।
কিন্তু পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তদন্তের পর জানানো হল, ভারতের দেওয়া ওই তথ্যপ্রমাণ যথেষ্ট নয়। পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে কোনওভাবেই পাকিস্তান জড়িত নয়। এমনকি যে জায়গাগুলিতে ভারত বোমাবর্ষণ করেছে কিংবা যে ২২টি স্থানে জঙ্গী ঘাঁটি থাকার কথা তাঁরা ডসিয়ারে উল্লেখ করেছে, তারা ওই ২২ টি জায়গা খুঁজে দেখেছে। কোথাও কোনও জঙ্গী ঘাঁটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনে ভারত সেই জায়গাগুলি দেখে যেতে পারে। পাক বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ‘পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে ভারত সরকার যে তথ্য দিয়েছিল, সেই তথ্য অনুযায়ী পুরোটাই তদন্ত করেছে পাকিস্তান। প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, আমরা তা ভারত সরকারকে জানিয়েছি। তদন্তের সমস্ত রিপোর্টই আমরা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছি। তবে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও প্রমাণ প্রয়োজন। ভারত যে ২২টি জায়গায় জঙ্গী ঘাঁটি থাকার কথা জানিয়েছিল, সেই জায়গাগুলিও পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও জঙ্গী ঘাঁটিই নেই। ভারত সরকার আবেদন করলে, অবশ্যই আমরা সেই জায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখাতে পারি।’
বিবৃতিতে পাক সরকার আরও জানিয়েছে, ভারতের দেওয়া তথ্যপ্রমাণ আমরা খতিয়ে দেখেছি। জঙ্গী আদিল দারের যে ভিডিও ক্লিপে হামলা চালাতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল, তাও দেখেছি। যে হোয়াটস অ্যাপ ও টেলিগ্রাম নম্বর থেকে জঙ্গী হামলার পক্ষে প্রচার করা হয়েছিল, সবই খতিয়ে দেখা হয়েছে। ভারত থেকে যে জিএসএম নম্বরটি দেওয়া হয়েছে, তার সম্পর্কে সব তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে সার্ভিস প্রোভাইডারকে। এছাড়া পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত ৫৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে পাকিস্তানের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত যদি আমাদের অনুরোধ করে, আমরা তাদের এখানে এসে জায়গাগুলো দেখতে অনুমতি দেব। যদিও, পাকিস্তানের এই বিবৃতির পর কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের দাবি, আসলে পাকিস্তান জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিতে চায় না। তাই আরও প্রমাণের দাবি করে গোটা বিষয়টিকে নিয়ে টালবাহানা করতে চাইছে তারা। কারণ, এর আগে মুম্বই হামলা নিয়েও পাকিস্তানকে প্রমাণ দিয়েছিল ভারত। কিন্তু তারপর কয়েক বছর কেটে গেলেও পাকিস্তানের তরফে এখনও হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।