গত ১০ মার্চ ভোট ঘোষণা ও নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেদিন থেকেই গোটা দেশজুড়ে লাগু হয়ে গেছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোটের ঠিক মুখে বুধবার সকালে হঠাৎ যখন টুইট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। জানা গেছিল, জাতির উদ্দেশ্যে নাকি বক্তৃতা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এমনও হতে পারে! এতে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না? ভোট ঘোষণার পর কোনও নতুন ঘোষণা কি করতে পারেন দেশের প্রধানমন্ত্রী!
অবশেষে নির্ধারিত সময়ের পরেও আধ ঘন্টা সময় দেশবাসীকে অপেক্ষায় রেখে মোদী ঘোষণা করেন, মহাকাশে উপগ্রহ ধ্বংস করেছে ভারত। এটা বড় সাফল্য। মহাকাশে চতুর্থ শক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছি আমরা। তিনি এ-ও জানান, বৈজ্ঞানিকদের এই অপারেশনের নাম ছিল মিশন শক্তি। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কারণ অপারেশন শক্তি অনেক আগে শুরু হওয়া প্রকল্প। তার সাফল্যের কথাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘আমি এমন ভারতের পরিকল্পনা করি যে ভারত সময়ের থেকে দু কদম এগিয়ে থাকবে। নিজের পায়ে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াবে।’ এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে সরকারি সম্প্রচার ব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী কি ভোট ঘোষণার পর জাতির উদ্দেশে এ কথা বলতে পারেন? ভোট মরশুমে এ তো এক প্রকার আত্মপ্রচারই!
মোদীর এ কথা রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই কানে বাজতে শুরু করেছে। তা নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। তৃণমূলের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘মিশন শক্তির’ সাফল্য তো ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। এ ব্যাপারে সাফল্যের কথা ঘোষণা করার প্রথম অধিকার তো তাঁদের। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সাফল্যকে আসলে মোদী সরকারের সাফল্য হিসাবে দেখাতে চাইলেন। ‘জাতির উদ্দেশে ভাষণের’ নামে তা দূরদর্শন, আকাশবাণী সহ সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হল। এটা আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন নয় তো কি!
তৃণমূলের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, সন্দেহ নেই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেকেই নালিশ করবেন। যদিও তার পরেও বিশেষ হয়তো কিছুই হবে না। তবে এ সবের মধ্যে দিয়ে আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির গরিমা অনেক খাটো করে দিয়েছেন মোদী। এবার নির্বাচনী ব্যবস্থাতেও জল মেশাতে শুরু করে দিলেন।
দলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এই ঘোষণাকে ভোটের আগে ফায়দা তোলার লাগামহীন নাটক বলে কটাক্ষ করেন। টুইটারে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের এক্সপায়ারি ডেট ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই বিজেপির ডুবন্ত জাহাজকে অক্সিজেন দিতেই এদিন এই সমস্ত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ আসলে জাহাজ যে ডুবছে, তা টের পাচ্ছেন তিনি। তাই ভোটের আগেই মাত্রাছাড়া নাটক শুরু করেছেন।