সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় এ কথা পরিষ্কার যে, শুধু বাঙালি হওয়ার ‘অপরাধ’-এই আজ আসামের বাঙালিরা ভয়ংকর অবস্থার সম্মুখীন। এনআরসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্থিরতার ফলে সে রাজ্যে খুন হতে হচ্ছে একের পর এক বাংলাভাষীকে। যদিও এখনও পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও কিনারা হয়নি। এবার সারা বাঙালি যুব ছাত্র সংস্থার সভাপতি চন্দন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করলেন, আসামে ডি ভোটার ও ফরেনার্স ট্রাইবুন্যাল–এর মাধ্যমে গরিব বাঙালি পরিবারের লোকেদের হেনস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজ অবধি শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এবং ভাষাগত বৈষম্যের কারণে যাঁদের বিদেশি–সংক্রান্ত নোটিস দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৯৯.৯৯ শতাংশই বাঙালি। এবং, তার ৯৬ শতাংশেরও বেশি ট্রাইব্যুনাল কোর্টের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, তাঁরা ভারতীয়। রাজ্যের উগ্র অসমিয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির মিথ্যা প্রচারে ভারতীয়রা হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশি।
সংগঠনের তরফে এ প্রশ্নও তোলা হয়েছে, নাগরিক পঞ্জীর পরীক্ষার কাজ চলছে, একেক জনকে হাজিরা দিতে ৮০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটারও পাড়ি দিতে হচ্ছে, কেন? ডি-সন্ত্রাসে জেরবার হয়ে ৪১ জনকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। দেশ ভাগের বলি হয়ে আসা মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এই বিরোধিতা কেন? নাগরিকত্ব বিল ২০১৬-কে সংশোধন করে আনার পক্ষে তাঁরা। কারণ, এই বিলে নাগরিকত্ব পাওয়াই দুষ্কর।
অাসামের মানবাধিকার কর্মী কমল চক্রবর্তী নানা ক্যাম্পে থাকা নির্যাতিতদের মর্মান্তিক কাহিনি তুলে ধরেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডেপুটি রেজিস্ট্রার নীতীশ বিশ্বাস বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নাগরিকত্বের ব্যাপারটি নির্বাচনী ইস্তাহারে এনে বলতে হবে তাদের অবস্থান। মানবাধিকার কর্মী প্রসূন মৈত্র তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান কী করুণ অবস্থার মধ্যে নোটিস পাওয়া গরিব খেটে খাওয়া মানুষগুলি দিন কাটাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন যে, ‘আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর নামে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে নিম্নমানের রাজনীতি করা হচ্ছে।’ তিনি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, ‘এনআরসি-র নামে বাঙালি খেদাও চালাচ্ছে বিজেপি।’ সেই অভিযোগ আবারও সত্যি বলে প্রমাণিত হয়ে গেল, ডি ভোটার ও ফরেনার্স ট্রাইবুন্যাল–এর মাধ্যমে গরিব বাঙালি পরিবারগুলিকে হেনস্থা করার ঘটনায়।