লোকসভা ভোটের আগে আজ বুধবার সাংবাদিক স্মমেলনে দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন ভোটে জেতার পর জোট সরকারের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিতেও এই সমস্ত বিষয়গুলি থাকবে।
এদিন দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘প্রত্যেকটা রাজ্য নিজের মতো ইস্তাহার প্রকাশ করে। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠন করব। ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করা হবে। সকলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নিজের মত চাপিয়ে দিতে পারি না। সর্বভারতীয় স্তরে কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করব। তাতে সর্বভারতীয় ইস্যুও থাকবে’।
মোদী সরকারের নোটবন্দীর সিদ্ধান্তকে তুলোধোনা করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘নোটবন্দি কার স্বার্থে? তদন্তের দাবি করছি’। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে এই নিয়ে তদন্ত করানো হবে। মোদী সরকারের আমলে দেশের বেকার যুবকদের অবস্থা শোচনীয়। এই নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করেন মমতা। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘দেশের যুবকদের কর্মসংস্থান দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ২ কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। বাংলায় কর্মসংস্থান ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তপশিলী জাতি-উপজাতি ও সংখ্যালঘুদের চাকরি দিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।
কৃষক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মমতা বলেন, ‘জমির মিউটেশন ফি মকুব, খাজনা মকুব, বিনামূল্যে শস্য বিমার মতো কাজ করেছি বাংলায়। সারা ভারতে একমাত্র বাংলাতেই কৃষকদের আয় তিনগুণ বেড়েছে। বাংলা পরপর তিনবার কৃষিকর্মণ পুরস্কার পেয়েছেন। কৃষকদের জন্য সর্বতোভাবে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হোক’। অসংগঠিত ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এই নিয়ে মোদী সরকারকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘৯০ লক্ষ শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এসেছেন বাংলায়। তাঁরা ২৫ টাকা দিলে আমরা ২৫টাকা দিই। তাঁরা পেনশন, ছেলেমেয়ের পড়াশুনোর জন্য টাকা পান। মোদীবাবুর মতো নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিই না। ওরা ১৫ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল, আজ পর্যন্ত দিয়েছে? ওরা বলে, করে না’।
নারী ক্ষমতায়নেও বিশেষ জোর দেন মমতা। বলেন, ‘গতবার ৩৫ শতাংশ নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি ছিলেন। এবারও ৪০ শতাংশের বেশি মহিলা প্রার্থী। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করেছি মহিলার নামে। প্রচুর প্রকল্প রয়েছে মেয়েদের জন্য। কন্যাশ্রী প্রকল্প যুগান্তকারী। স্কুলছুটের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী। এখানে কোনও বাছাই নেই। নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে’।
বিশেষজ্ঞদের দিয়ে জিএসটি পর্যালোচনা করার কথাও বলেন মমতা। ১০০ দিনের কাজের অপরেও বিশেষ জোর দেন। মমতা বলেন, ‘একশো দিনের কাজ জীবিকা নির্বাহের বড় জায়গা। ৬,০০০ টাকা আয় করতে পারেন। এটা ২০০দিন করতে বলছি। এখন ১৯০ টাকা পান, এটা দ্বিগুণ করতে বলছি। পরিবারগুলির কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত হবে। ১৫ দিনের মধ্যে কাজের টাকা পান, তা দেখতে হবে’।
যোজনা কমিশনকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ও যোজনা কমিশনের চিন্তাভাবনা করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। মোদী ক্ষমতায় আসার পর সেটি তুলে দিয়েছেন। হঠাত্ করে রাতারাতি যোজনা কমিশন তুলে দেওয়া হল, কেন কে জানে? কয়েকজন লোক নিয়ে করে দিলেন নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগে ভাষণ ছাড়া কিছু হয় না। রাজ্যের কথা বলার সুযোগ নেই। এটা ধ্বংসাত্নক। যোজনা কমিশন নতুন করে ফিরিয়ে আনব। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আরও সমৃদ্ধ করতে পারি, সেই চেষ্টা করব’।
