তখনও নিজেকে তিনি ‘দেশের চৌকিদার’ বলে দাবি করেননি। তখনও বিরোধীরা তাঁকে ‘আম্বানি-আদানিদের চৌকিদার’ বলেননি। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখনও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সেই আমলে চৌকিদার মঙ্গলভাই ভিকাভাই ঠাকুরের চাকরি কেড়ে নিয়েছিল আজকের চৌকিদারের সরকার। তাঁর ‘দোষ’ এটুকুই ছিল, ন’বছর ধরে ঠকার পরে ন্যূনতম বেতনের দাবি তুলেছিলেন মঙ্গলভাই।
প্রসঙ্গত, মোদী প্রথম গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন ২০০১ সালে। দু’বছর পর তাঁর সরকার মঙ্গলভাইকে চৌকিদারির চাকরি দেয়। বেতন সব মিলিয়ে ১৫০০ টাকা। টানা ন’বছর ওই বেতনে কাজ করার পরে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম পারিশ্রমিক দাবি করায় ২০১২ সালের ২৩ মার্চ চাকরি যায় মঙ্গলভাইয়ের। মোদী তখন তৃতীয় দফায় রাজপাট চালাচ্ছেন গুজরাটে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলভাই নালিশ ঠুকেছিলেন শ্রম আদালতে। সেখানে রায় হয়, বরখাস্তের নির্দেশ অবৈধ। পুনর্বহাল করতে হবে তাঁকে। কিন্তু তারপরও গুজরাটের মোদী সরকার তাঁকে নিতে রাজি হয়নি। তারা শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। উচ্চ আদালত ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি সরকারের ওই আর্জি খারিজ করে দেয়। এর পরে ন্যূনতম বেতন নিয়ে মামলাতেও উচ্চ আদালতে হেরে যায় রাজ্য সরকার।
বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা জানিয়ে দেন, মঙ্গলভাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম ও রাজ্য সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। নির্ধারিত ন্যূনতম পারিশ্রমিক দিতেই হবে। মঙ্গলভাই যে নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর কাজ করে যাচ্ছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে বিচারপতি লেখেন, ‘রেকর্ড বলছে, কোনও ছেদ নেই, এই কর্মী ২৪০ দিনের বেশি কাজ করেছেন প্রতি বছর। এমনকি বরখাস্তের নির্দেশে যখন বেতন পাচ্ছিলেন না, সেই ১২ মাসেও।’ সেটা ২০১৬-র ৪ মে। তত দিনে দেশের ‘চৌকিদার’ হিসেবে দু’বছর দেশ শাসন করা হয়ে গেছে মোদীর।
বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, রাফাল প্রশ্নে ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগান তুলে বিরোধীরা এই পেশার সব মানুষকে অপমান করছেন। ভোটের মুখে মোদী এখন ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ অভিযান শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি দলের নেতা-মন্ত্রীরাও এখন টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজেদের নামের আগে ‘চৌকিদার’ বসাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যেই গত সপ্তাহে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ঝাড়খন্ডের বিজেপি সরকার ১০ হাজার ঝাড়ুদারকে চার মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না।
আর এবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এল চৌকিদার মঙ্গলভাইকে তার হক না দেওয়ার বৃত্তান্ত। যা নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীদের একাংশও মানছেন, চৌকিদার হিসেবে মোদী অত বেশি বুক না ঠুকলে হয়তো বিরোধীরা এ জাতীয় ঘটনাগুলি খুঁচিয়ে তোলার উৎসাহ পেত না এতটা। অন্যদিকে, ভোটের মুখে এই ঘটনা যে বিরোধীদের হাতে ‘চৌকিদার’কে হঠানোর নতুন অস্ত্র তুলে দিল, তা বলাই বাহুল্য।