দীর্ঘদিন ধরে রিংয়ের বাইরে থাকলেও তাঁর কুস্তিতে কোনো মরচে পড়েনি। গুরশরণপ্রীত ৭ বছর পর রিংয়ে ফিরে একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন কিরণকে ৫–১ ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জিতেছেন। পানিপথে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় নামবেন, না ভাইয়ের বিয়েতে থাকবেন? বেশ দোটানায় ছিলেন পাঞ্জাবের মহিলা কুস্তিগির গুরশরণপ্রীত কাউর। শেষ পর্যন্ত রিং–কেই বেছে নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ডোপ টেস্টে ধরা পড়েন গুরশরণ। তার পর থেকেই রিংয়ের বাইরে। ৯ মাস নির্বাসিত ছিলেন। পরে বিয়ে করেন পাঞ্জাব পুলিশের কনস্টেবল সন্দীপ সিংকে, যিনি ছিলেন মাদকাসক্ত। বিয়ের দু’বছরের মাথায় গুরশরণকে ডিভোর্স দেন সন্দীপ এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আসলে ছেলেদের সঙ্গে অনুশীলন মেনে নিতে পারেননি স্বামী। গুরশরণের কথায়, “ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করলেই সন্দীপ আমাকে মারত। খেতে দিত না, আমি মৃত ব্যক্তির মতো থাকতাম। শাশুড়ি পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন। আমি কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় প্রায়ই মারধর করতেন। বলতেন বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। স্বামী বলত, হয় তাকে বেছে নিতে হবে, না হলে মেয়েকে। মেয়েকেই বেছে নিয়েছিলাম”।
২০০০ সালে আন্তঃরাজ্য অ্যাথলেটিক্সে হ্যামার থ্রোয়ে ৪৪ মিটার ছুঁড়ে পাঞ্জাব পুলিশে চাকরি পান। একদিন পাঞ্জাব পুলিশের এক শীর্ষকর্তা গুরশরণকে বলেছিলেন, তাঁকে জলন্ধরে সোনিকা কালিরামনের সঙ্গে কুস্তি প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। গুরশরণ রাজি হয়ে যান। এরপর ২০০৬ ও ২০১০ এশিয়ান গেমসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। দু’বারই চতুর্থ হন। দেশের হয়ে ১১ বছরে ৩৩টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১১টি পদক জেতেন গুরশরণ। লখনউয়ে জাতীয় ক্যাম্পে যোগ দিতে চান গুরশরণ। এর জন্য তাঁকে কুস্তি ফেডারেশনকে চিঠি লিখতে হবে। একসময় প্রচুর চোখের জল ফেলেছিলেন। তবে আর কাঁদতে চান না গুরশরণ। পানিপথে স্থানীয় প্রতিযোগিতাতেও সোনা জিতলেন। পুরনো ছন্দ ফিরে পেয়ে খুশি গুরশরণ। তাঁর কথায়, “এইভাবে ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগছে। কুস্তি আমাকে সবকিছুই দিয়েছে। এখন আমার হারানোর কিছু নেই। সবকিছু করার জন্য আমি তৈরি”।