দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের সৌজন্যে, একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপদ সামলানোর অভিজ্ঞতায়, টানা ৮ বছর দক্ষতার সঙ্গে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য দাবিদার। এভাবেই মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে প্রচার শুরু করল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ে বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে উৎখাতের ডাক দেওয়ার পর থেকেই আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে এসেছিল বাংলার অগ্নিকন্যার নাম। ফিরহাদ হাকিমের মতো বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতাও মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখার দাবি জানিয়েছিলেন। তৃণমূলের ২১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে একটি ভিডিও মেসেজে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতাকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে দলীয় পতাকা উত্তোলন করে একই আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীও। তিনি বলেছিলেন, ‘২০১১ সালে বামফ্রন্টের জগদ্দল পাথরকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এ রাজ্য থেকে সরানো হয়েছিল। একই ভাবে এ বছর লোকসভা ভোটে কেন্দ্রের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎখাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপাতে হবে।’ এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের ফেসবুক ফ্যান পেজ, অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস- এআইটিসি সাপোর্টার্স, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানোর জন্য প্রচার শুরু করল। ওই ফেসবুক পেজের একাধিক পোস্টে মমতাকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে প্রধানমন্ত্রী করার পথ সহজ করার জন্য আবেদন করেছে রাজ্যবাসীকে।
‘বলছে দেশের জনতা, প্রধানমন্ত্রী মমতা’ বা ‘কেন্দ্রে এবার, মমতা সরকার কোনো শক্তি নেই রোখার’ ইত্যাদি একাধিক স্লোগান পোস্ট করা হয়েছে তৃণমূলের এই ফ্যান পেজে। পোস্টগুলির সঙ্গে যুক্ত ছবিতে ‘ইন্ডিয়া উইথ দিদি’ বা দিদির সঙ্গে ভারত লেখা লোগো। সম্প্রতি বাঁকুড়ার সভা থেকেও ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক আবেদন করেছিলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘দিল্লী চলো’ স্লোগানের আশি বছর পর বাংলার এক ‘অগ্নিকন্যা’ ফের একবার দিল্লী চলোর ডাক দিচ্ছেন। সেই দাবিকে সামনে রেখে এবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও শুরু হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করতে প্রচার।
জোটের সলতে পাকানোর ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন মমতা। ব্রিগেডে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সমাবেশে প্রায় সমস্ত বিরোধী নেতাদের একমঞ্চে আনা থেকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ, অন্যান্য বিরোধী নেতার চেয়ে যে প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে মমতা বেশ অনেকটাই এগিয়ে, সেটা মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। একাধিক বিরোধী দলের নেতারাও দলনেত্রী হিসাবে মমতাকে প্রকাশ্যে সমর্থনও জানিয়েছেন। বিরোধী নেতা-নেত্রীদের মধ্যে এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতাই সবচেয়ে বেশি। তাই ভোটের পর বিরোধীদের কাছে সরকার তৈরির পরিস্থিতি তৈরি হলে মমতাই হবেন অটোমেটিক চয়েজ। এই প্রেক্ষিতেই এবার অন্তর্জালের দুনিয়াতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে প্রচার শুরু করে দিলেন তাঁর সমর্থকেরা।