তৃণমূল যখন ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে প্রচারে, তখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেই উঠতে পারেনি। অবশেষে ২১ তারিখ প্রকাশিত হল সেই তালিকা। সেখানে দাপট বজায় থাকল সঙ্ঘঘনিষ্ঠদেরই। আর প্রার্থী ঘোষণা হতেই আবার প্রকাশ্যে এল বিজেপির কোন্দল। যা সামলাতে কার্যত দিশেহারা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত মুখ না হলেও দীর্ঘ দিনের সঙ্ঘঘনিষ্ঠরা টিকিট পেয়েছেন। মুকুল রায়-কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের হাত ধরে তৃণমূল এবং বাম শিবির থেকে যে সব বড় বা পরিচিত নাম সম্প্রতি বিজেপিতে সামিল হয়েছেন, টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁদেরও। যে সব আসনে তাঁরা লড়তে চেয়েছিলেন, সেখানেই তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে। এর ফলে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। প্রশ্ন উঠেছে, দলে যোগ দিয়েই কিভাবে মেলে টিকিট?
বসিরহাটে সায়ন্তন বসুকে প্রার্থী করার পরেই চরমে ওঠে বিজেপি কর্মীদের অসন্তোষ। বসিরহাটে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ‘বহিরাগত’ সায়ন্তন বসুকে মানা হবে না বলে পোস্টার দিলেন দলেরই কর্মী-সমর্থকেরা। সেখানে স্থানীয় নেতাকেই প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এলাকার বিজেপি নেতা কর্মীদের সাফ কথা, আমাদের জেলায় শহুরে নেতাকে মানব না। তাই এলাকার নেতাকেই প্রার্থী করতে হবে।
অন্যদিকে কোচবিহারে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে হোর্ডিং-পোস্টার লাগালেন বিজেপির কর্মীরা। নিশীথের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগালেন খোদ বিজেপি কর্মীরাই। সেখানেও স্থানীয় নেতাকেই প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন কর্মীরা। এমনকী ‘বিজেপির নামে দিনহাটার স্মাগলারকে একটিও ভোট নয়’ বলেও পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, হয় স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করতে হবে নয়তো ভোট যাবে নোটায়। প্রতিটি পোস্টারের নীচে লেখা, প্রচারেঃ বসিরহাট লোকসভা বিজেপি কর্মীবৃন্দ।
নবদ্বীপের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ নস্করকে কেন তমলুকের প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দলেরই একাংশ। তমলুকে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘আমরা প্রার্থী নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। পরিচিত কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থী করার জন্য আমরা নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানাব।’’ দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী চন্দ্র বসুর বিরুদ্ধেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের অনেকে।
দিল্লিতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে রাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্য দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাজকমল পাঠক। বলেছিলেন, ‘‘২৮ বছর পার্টি করছি, কোনও দিন প্রার্থী হতে চাইনি। এ বার চেয়েছিলাম। বুঝলাম দলে আমার গুরুত্ব নেই।’’ কার্যত একই রকম প্রতিক্রিয়া মালদহের নেতাদের একাংশের। জেলা দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে আসা যে খগেন মুর্মু দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করলেন, আজ তাঁকেই প্রার্থী করা হল। কোন মুখে কর্মীদের প্রচারে নামতে বলব?” এমনিতেই অনেক দেরিতে প্রকাশ হয়েছে প্রার্থী তালিকা তার ওপরে প্রার্থী নিয়ে দলীয় কর্মীদের অসন্তোষ উঠেছে চরমে। এই আবহে প্রচারে মন দেবেন নাকি অন্দমহলের ঝামেলা সামলাবেন তা স্থির করতে না পেরে নাজেহাল দিলীপ।