এনআরসি-র কারণে বাঙালিরা ক্ষিপ্ত রাজ্যের বিজেপি সরকারের ওপর। আর অসমিয়ারাও ক্ষিপ্ত নাগরিকত্ব সংশোধনীর কারণে। ইতিমধ্যেই সরকার ছেড়ে বেরিয়ে গেছে জোটসঙ্গী অগপ। সবমিলিয়ে ভোট ঘোষণার আগে থেকেই আসামে বিপাকে পড়েছিল বিজেপি। এরই মধ্যে শুক্রবার অখিল গগৈয়ের কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বাধীন ৭০টি সংগঠনের জোট সাফ জানিয়ে দিল, আসামে বিজেপি বা তাদের জোটসঙ্গীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নয়। পরাস্ত করা হবে বিজেপি জোটকে।
ভােট যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে অশান্তি। দলত্যাগী বিজেপি সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন গতকাল। কোন দলের হয়ে তিনি মনােনয়নপত্র দাখিল করবেন এখনও স্পষ্ট নয়। এই অবস্থায় ৩০ মার্চ আসামে ভোটের প্রচারে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই বিজেপি নেতারা এখন ব্যস্ত তাঁদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভােট-ম্যানেজার হিমন্ত বিশ্বশর্মার মান ভাঙাতে।
একসময়ে কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা তথা মন্ত্রী ছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। পরে তিনি একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। নাম জড়ায় সারদাতেও। এরপরই সিবিআই তদন্তের হাত বাঁচতে বিজেপিতে যােগ দেন হিমন্ত। এবং ক্রমশই তিনি হয়ে ওঠেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেরুয়া অভিযানের কারিগর। এই মুহূর্তে আসাম সরকারের অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতরের মতাে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। রাজ্যের অঘাষিত উপমুখ্যমন্ত্রীও তিনি। সেইসঙ্গে অমিত শাহের সাধের নেডা (নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স)-এর আহ্বায়ক।
সেই নেডাই এখন ছারখার। রাজ্যে রাজ্যে শরিকরা বেলাগাম। নেডার আহ্বায়ক হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তেজপুর কেন্দ্রে। রাজ্য নেতৃত্ব পাঠায় তার নাম। কিন্তু হিমন্ত টিকিট পাননি। বিজেপি অবশ্য এখনও তেজপুরের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে হিমন্ত টিকিট পাবেন এই আশঙ্কায় তেজপুরের বর্তমান সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা আগেভাগেই বিজেপি ছেড়ে দিয়েছেন। শুক্রবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ টুইট করে জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হিমন্তকে।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও জানিয়েছেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করে রাজ্যে ১৪টির মধ্যে ১২টি আসনে জয় নিশ্চিত করবেন। টুইটে পাল্টা সৌজন্য জানিয়েছেন হিমন্ত। তবে দলবদলে পারদর্শী এই নেতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, বেজায় চটে আছেন তিনি। সর্বানন্দের ডেপুটি হিসাবে আর কাজ করতে রাজি নন। বহুদিন ধরেই দিল্লীতে রাজনীতি করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন। লােকসভা ভােটের পরই বিজেপি-তে ঝড় ওঠার পূর্বাভাস
দিচ্ছে হিমন্ত-শিবির।
অন্যদিকে, আসামের শক্তিশালী যুবনেতা অখিল গগৈ গতকালই সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যবাসীকে বিজেপি ও তাঁদের জোট শরিকদের পরাস্ত করার ডাক দেন। অখিলের কেএমএসএস-সহ ৭০ টি সংগঠনের আশঙ্কা, বিজেপি জিতলে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করানো হবে। আর তাতে ১ কোটি ৭০ লাখ বাংলাদেশি অাসামে বসবাসের অধিকার পেয়ে যাবে। তাই ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে পরাস্ত করতেই উঠেপড়ে লেগেছে তারা।