দাঙ্গা লাগানো, অশান্তি সৃষ্টি, পার্টি অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি কোনও ‘দু’নম্বরী’ কাজ করাও যে বিজেপির পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়, আবারও মিলল তার প্রমাণ। ভোটের মুখে এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। পেশায় শিক্ষক ওই নেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তর কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া থানা এলাকায়। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত অনুতোষ বিশ্বাস হাবড়া থানার ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা। নিজের এলাকায় তিনি বিজেপি নেতা বলেই পরিচিত। গত ১০ মার্চ নদিয়া জেলার হাঁসখালি থানার এক যুবক হাবড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোট ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা প্রতারণা করেছেন অনুতোষ।
ওই যুবক জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষকের একটি পরীক্ষা দিতে গিয়ে এক বন্ধু মারফত অনুতোষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। যুবকের অভিযোগ, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করে অনুতোষ। কিন্তু তার জন্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত। আর তা হলেই চাকরি হয়ে যাবে। বেকার ওই যুবক অনুতোষের কথা বিশ্বাস করে তাঁর বাড়িতে যান। চাকরির আশায় ওই যুবক ধার-দেনা করে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা জোগাড় করেন। এবং সেই টাকা অনুতোষের হাতে তুলে দেন বলে ওই যুবকের দাবি।
কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায় ওই যুবকের নাম তালিকায় নেই। তখনই তিনি বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তখন তিনি অনুতোষের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চান। অনুতোষ দিন বাড়াতে থাকেন। অভিযোগ, অনুতোষ ওই যুবককে হুমকি দেন। প্রাতারিত যুবক জানান, তিনি একা নন, তাঁর মতো একাধিক বেকার যুবক-যুবতীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে।
প্রতারিত যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে হাবড়া থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অনুতোষের বিরুদ্ধে মোট দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে। তিনি সরকারি চাকরি করার কারণে তাঁর উদ্দেশ্যে নোটিস জারি করা হয়েছে। সেই নোটিসের কোনও উত্তর না দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, নোটিস পাঠিয়ে থানায় তাঁকে হাজির হওয়ার কথা বলা হলেও এখনও হাজির হননি অনুতোষ। এবার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। যদিও এই মুহূর্তে তিনি পলাতক।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজেপি নেতা অনুতোষ উত্তর ২৪ পরগনা বিজেপির জেলা নেতৃত্বের ঘনিষ্ট। বিজেপির বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে জেলা ও রাজ্য নেতাদের পাশে দেখা যায়। আর সেটিকেই কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে, শাসক দলের এক নেতার কটাক্ষ, চাকরি দেওয়ার নামে শুধু আমজনতার সঙ্গে প্রতারণা নয়, বিজেপি গোটা দেশের সঙ্গেই প্রতারণা করছে।