গত ১০ মার্চ ভোট ঘোষণা ও নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেইসঙ্গে সেদিন থেকেই চালু হয়ে গেছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি। এই আদর্শ আচরণবিধি হল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য একগুচ্ছ নিয়ম, যা রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি। এবার আবারও সেই নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন বিজেপির। অভিযোগ, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পরেও দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ছাপাচ্ছে সরকার।
কেন আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পরেও কেন দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটে নরেন্দ্র মোদীর ছবি? কেনই বা টিকিটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে চলছে সরকারি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) এর বিজ্ঞাপন? এই প্রশ্ন তুলে দিল্লীতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। তাদের দাবির স্বপক্ষে একটি টিকিটও কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি যে গান বেঁধেছে, সেখানে তৃণমূলের নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার প্রমাণ দিতে হবে বলেও দাবি করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গানের সিডি কমিশনের হাতে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছে তৃণমূল।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলের নামে বাংলার মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বিজেপি যে রাজ্যের বুথকে স্পর্শকাতর বলে অভিযোগ করেছে, কমিশনের কাছে তাও মিথ্যে বলে দাবি করে তৃণমূল লিখিত ভাবে জানিয়েছে, রাজ্যে তাদের সরকারের আমলে মাওবাদী সমস্যা মিটেছে। বাম আমলের মতো এখন আর কেশপুর, গড়বেতা, নানুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের সন্ত্রাসের কথা শুনতে হয় না। পশ্চিমবঙ্গ শান্তিপূর্ণ একটি রাজ্য উল্লেখ করে কমিশনে তৃণমূল জানিয়েছে, বিজেপির কথায় নয়, স্পর্শকাতর বুথ প্রসঙ্গে কমিশন যেন যাবতীয় তথ্য নিজে খতিয়ে দেখে।
কমিশনের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ছিলেন তৃণমূল নেতা চন্দন মিত্রও। কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ডেরেক বলেন, ভোট ঘোষণা হয়েছে ১০ মার্চ। সেদিন থেকেই আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু হয়েছে। তাহলে সোমবার যে রেলের টিকিট কাটা হয়েছে, সেখানেও কেন নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রচার বজায় আছে? একইসঙ্গে কমিশনে জমা দেওয়া চিঠির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য যে গান বাজাচ্ছে সেখানে তৃণমূলকে নিয়ে যা যা মিথ্যে অভিযোগ করেছে, তার প্রমাণ দিতে হবে। মিথ্যে অভিযোগ মোটেই মেনে নেওয়া হবে না।
একইরকমভাবে বিভিন্ন পেট্রল পাম্পে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি লাগানো পোস্টার, রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে মোদীর ছবি নিয়ে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রেলকে চিঠিও পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন দেখার টিকিটের ক্ষেত্রে কী করে কমিশন। উল্লেখ্য, নির্বাচন ঘোষণার দিন কয়েক পরই মোদী সরকারের আয়ুষ্মান ভারত যোজনার চিঠি বিলি করা হয়েছেল ছিল হুগলীর বেলুন এলাকায়। তখনও নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। নির্বাচন ঘোষণার পরও ডাকঘর থেকে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেওয়া স্বাস্থ্য বিমার কার্ড বিলি করা হচ্ছিল কেন, তা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছিলেন আধিকারিকরা। আর এবার দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটে মোদীর ছবি নিয়ে বিতর্কে বিজেপি।