হাতে আর একমাসও নেই। একেবারে দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। এরই মধ্যে এবার ‘রাম’-এর পাশাপাশি বামেদের বিরুদ্ধেও সুর চড়াল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। যারা পুরসভাই, চালাতে পারে না, তারা আবার লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করছে। সোমবার শিলিগুড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামের নির্বাচনী কর্মীসভায় ঠিক এই ভাবেই সিপিএমের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা পর্যক্ষেক তথা রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পরেই তো পুরসভার নির্বাচন। এখানে একজন সিপিএম নেতা আছেন। তিনি আবার পুরসভার মেয়র। যিনি খবরের কাগজ দেখে বিবৃতি দেন। যিনি মানুষকে পরিশ্রুত জল দিতে পারেন না। সেই মেয়রের পদে থাকার কোনও অধিকার নেই।
এখানেই না থেমে অরূপ বলেন, পুরসভাই চালাতে পারে না, তারা আবার ভোট চায় লোকসভায়। তাঁর কথায়, দু’দিন ধরে শিলিগুড়িতে আছি। প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন একটা শহর যেখানে খোলা ড্রেন রয়েছে। জঞ্জালে ভরে থাকে শহরে। প্রসঙ্গত, গতকালের কর্মীসভায় তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাইকে সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন জেলার পর্যবেক্ষক। অমরবাবু ঝরঝরে বাংলাতেই বক্তব্য রেখে রীতিমতো চমকে দেন সকলকে।
তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বাংলার জামাই বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার দায়িত্ব হল তা পালন করা। এই প্রথম দু’টি বড় দল একসঙ্গে মিলে আমাকে প্রার্থী করেছে। বিজেপি পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছেন। আমরা জানি পাহাড়ে অশান্তি হলে তার প্রভাব শিলিগুড়িতেও পড়ে। তাই আমরা চাই না অশান্তি। উন্নয়ন দিয়ে পাহাড় ও সমতলকে একসূত্রে বাঁধতে চান মমতা দিদি। আমি তাঁর হয়ে সেই কাজই করতে চাই।
গতকাল সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নেন অরূপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, মোদী বড় মিথ্যেবাদী। ভোটারদের কাছে গিয়ে বোঝাতে হবে যিনি চৌকিদার সেজে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ও মানুষকে ঠকিয়েছেন। বছরে ২ কোটি করে চাকরি, ১৫ লক্ষ টাকা করে অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে দেবেন বলেছিলেন। কারও অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে? চাকরি দূরের কথা ১০ কোটি বেকার হয়েছে। এইসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতির কথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলুন।
দার্জিলিংয়ে বিদায়ী সংসদ সদস্য তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার উদ্দেশ্যে অরূপ বলেন, পাহাড়ের জনজাতিকে তিনি অপমান করেছেন, তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা চাই সেই সুরিন্দর সিং আলুওয়ালাই আবার প্রার্থী হোন। তাঁর জমানত যদি এবার জব্দ করতে না পারি তাহলে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক নই। এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলায় বিজেপিকে একটি আসনও নয়। বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ, ২০১৯, বিজেপি হবে ফিনিশ।
গতকাল স্টেডিয়ামে কর্মীনেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। বুথ, ব্লক, মহকুমা, জেলা সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরা কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন। কর্মীদের উদ্দেশ্যে জেলার পর্যবেক্ষক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানুষের জন্য ৪৮ টি জনমুখী প্রকল্প চালু করেছেন। সেই প্রকল্পগুলির কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। উন্নয়নের প্রকল্পগুলির সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন কিনা তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিন। একবার নয় অন্তত দু’তিনবার প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোট চাইতে যেতেই হবে।