দিন কয়েক আগেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটে জিততে নীতি-আদর্শের তোয়াক্কাই করবে না তাঁর দল। সেই পথ ধরেই বিভিন্ন দল থেকে বহিষ্কৃত নেতানেত্রী এবং গুন্ডাদের দলে ঠাঁই দিচ্ছে রাজ্যের গেরুয়া শিবির। তবে বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতিকে রুখে দিতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২-এ ৪২টি আসন পাওয়াই যে তাঁর মূল লক্ষ্য, সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এবার দলনেত্রীর লক্ষ্যপূরণের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী একজোট হয়ে কাজের নির্দেশ দিল তৃণমূল। কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক, কেউ জিতেছেন পঞ্চায়েতে, কেউ আবার পুর-প্রতিনিধি। লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত, গত ভোটগুলিতে প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু জেতেনি, বাদ থাকছেন না তাঁরাও। লোকসভার এই নির্বাচনে পরোক্ষভাবে তাঁরা সকলেই ‘প্রার্থী’। অবশ্যই যাঁর যাঁর নিজের কেন্দ্রে।
অর্থাৎ যিনি পঞ্চায়েতের সদস্য তাঁকে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে হবে, মানে লোকসভায় দলের প্রার্থীকে লিড দিতে হবে। এই নিদান প্রযোজ্য গ্রাম থেকে রাজ্য, দলের সবস্তরের, সহ জনপ্রতিনিধির জন্যই। আর যাঁরা জনপ্রতিনিধি নয়, কিন্তু গত ভোটে প্রার্থী হয়েও জয় হাসিল করতে পারেননি, তাঁদেরও এ বার জিততেই হবে। অর্থাৎ, যে এলাকায় তিনি প্রার্থী ছিলেন সেখানে দলের লোকসভার প্রার্থীর জন্য লিড হাসিল করতে হবে।
এ বছর দার্জিলিং আসনটি ছিনিয়ে নিতে মরিয়া তৃণমূল। সোমবার শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিলিগুড়ি মহকুমার সমস্ত বুথের কর্মীদের নিয়ে সভা হয়। সেখানে দলের দার্জিলিং কেন্দ্রের প্রার্থী অমর সিং রাই, দার্জিলিং জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী গৌতম দেব এবং দলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় দলের পর্যবেক্ষক সাফ জানিয়ে দেন, ‘বুথে জিততে না-পারলে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নাম কোনও ভাবেই বিবেচনা করা হবে না। মনে রাখবেন, লোকসভার পরেই শিলিগুড়ি কর্পোরেশন আর মহকুমা পরিষদ নির্বাচন রয়েছে।’
আবার রবিবার নজরুল মঞ্চেও কলকাতা-দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে তৃণমূলের কর্মীসভায় বারে বারে কাউন্সিলরদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দিনই বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের ২৩ জন কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার। ছিলেন বিধায়ক সুজিত বসুও। কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে দলের বার্তা, আপনারা যে ভোটে জিতেছেন, সেই ভোটেই সাংসদ প্রার্থীকে জেতাতে হবে। প্রয়োজনে সকল বাড়ি-বাড়ি ঘুরে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে আমজনতার কাছে ভোট চাইতে হবে জনপ্রতিনিধিদের।
সোমবার দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত দক্ষিণ দমদম ও দমদম পুরসভার ৩৮ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠকেও একই বার্তা দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় ও বিধায়ক ব্রাত্য বসু। ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ৬ এপ্রিল দমদম স্টেশন থেকে আরএন গুহ রোড হয়ে দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত র্যালি করবে দল। তার আগে থেকেই অবশ্য কাউন্সিলরদের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত লড়াই ভুলে।
দলের নিদান জেনে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে মাঠে নেমে জোট বেঁধেছেন ঝাড়গ্রাম শহরের কাউন্সিলরেরাও৷ রবিবার শহরের দেবেন্দ্রমোহন হলে তৃণমূলের প্রচার সম্মেলনে ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, কনভেনর, বুথ কমিটির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় জেলার তিন বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, চূড়ামণি মাহাতো, খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম, জেলার নেতা দুর্গেশ মল্লদেব, শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়রা উপস্থিত ছিলেন৷ ছিলেন প্রার্থী বীরবাহা সোরেনও।
৪২-এ ৪২, লোকসভা নির্বাচনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নপূরণ করতে এমনই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে তৃণমূল। এখন জেলায় জেলায় কর্মিসভায় সে কথাই ব্যাখ্যা করছেন রাজ্যস্তরের নেতারা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, অতীতে বামেরা ক্যাডারদের প্রতি বুথে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিত। কিন্তু জয় হাসিলের লক্ষ্যে তৃণমূল যে কৌশল নিয়েছে, তাতে গোটা দলই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। এভাবে যৌথ দায়িত্ব নিশ্চিত করার নজির নেই বললেই চলে।