ফুটবল দুনিয়ার রাজপুত্র তিনি। তার পায়ের যাদুতে মাত গোটা বিশ্ব। তিনি লিওনেল মেসি। মাঠে তাঁর আগুন ঝরানো দেখে কে বলবে, এত মাস দলের বাইরে ছিলেন! দুরন্ত হ্যাটট্রিকে লা লিগায় তিনি একাই চূর্ণ করলেন রিয়াল বেতিসকে। যা দেখে বিপক্ষ সমর্থকরাও তাঁর নামে দিলেন জয়ধ্বনি। উঠে দাঁড়িয়ে জানালেন অভিবাদনও।
কিছু আছে সেরা ফুটবলার। তার আগে বর্ষসেরা ফুটবলার। তারও আগে লিও মেসি!’- রবিবার মধ্যরাতে মেসির তিন নম্বর গোলটার পর এ রকমই মন্তব্য ভেসে উঠেছিল গ্যারি লিনেকারের টুইটার অ্যাকাউন্টে। মেসির ওই তিন নম্বর গোলটার পর রিয়াল বেতিসের বেনিতো বিয়ামারিন স্টেডিয়ামের ছবিটাই যে পাল্টে গিয়েছিল। শুধু বার্সেলোনা নয়, বেতিস সমর্থকরাও উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছিলেন। হাতের স্মার্ট ফোন উঁচু করে ধরে তুলে রাখছিলেন ছবি। এত সহজেও গোল করা যায়!
প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটে রিয়াল বেতিস বক্সের সামনে থেকে বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো দুরন্ত ফ্রিকিকে প্রথম গোল করেন মেসি। ওই অর্ধেই সংযুক্ত সময়ে লুইস সুয়ারেসের ব্যাকহিল থেকে পাওয়া বলে সেই বাঁ পায়ের টোকায় দ্বিতীয় গোল এল এম টেনের। তবে স্টেডিয়াম মোহিত হয়ে যায়, দ্বিতীয়ার্ধের ৮৫ মিনিটে মেসির হ্যাটট্রিকের গোলটি দেখে। রিয়াল বেতিস বক্সের বাঁ দিকে বল পেয়েই তাতে বাঁ পায়ে আলতো চিপ করে গোলের দিকে ভাসিয়ে দেন। যা বিপক্ষের আগুয়ান গোলকিপার পও লোপেসের নাগাল এড়িয়ে বারের ভিতরের দিকে লেগে গোলে ঢোকে। অবিশ্বাস্য এই গোল দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বার্সেলোনার ফুটবল রাজপুত্রকে অভিবাদন জানান বিপক্ষের সমর্থকরা। মেসির নামে জয়ধ্বনিও দিতে শুরু করেন তাঁরা। টিভি সম্প্রচারে দেখা গিয়েছে, রিয়াল বেতিস গোলরক্ষকও গোল খেয়ে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে বিড়বিড় করছেন।
রবিবার রাতে রিয়াল বেতিসের ঘরের মাঠ বেনিতো ভিয়ামারিন স্টেডিয়ামে মেসির এই দাপুটে ফুটবলেই বার্সেলোনা ম্যাচ জিতল ৪-১। বার্সার অপর গোলদাতা লুইস সুয়ারেস। বেতিসের হয়ে ব্যবধান কমান লোরেন মোরন। এই জয়ের ফলে এ বারের লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। ২৮ ম্যাচে শীর্ষে থাকা পয়েন্ট ৬৬। সমসংখ্যক ম্যাচের পরে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আতলেতিকো দে মাদ্রিদ পিছিয়ে ১০ পয়েন্টে। ২৮ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৫৬।
লা লিগায় এটি ছিল মেসির ৩৩তম হ্যাটট্রিক। কেরিয়ারে ৫১তম। ক্রিস্তিয়ানো রোনাল্দোর (৫২) থেকে কেরিয়ার হ্যাটট্রিকে মাত্র এক পিছনে। দেশ, ক্লাব মিলিয়ে সাড়ে ছ’শোর বেশি গোল। তবু মেসি বিস্মিত। প্রতিপক্ষ সমর্থকদের থেকে এ রকম বন্দনা কি কোনও দিন পেয়েছেন? ম্যাচ শেষে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোনোর সময় নিজেই বলেছেন, ‘সত্যি কথা হল, আমি মনেই করতে পারছি না এ রকম ঘটনা আগে ঘটেছে কি না। আগে কখনও প্রতিপক্ষ সমর্থকরা এ ভাবে অভিনন্দন জানাননি। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি বেতিস সমর্থকদের। আমরা এই স্টেডিয়ামে বরাবার ভালো ব্যবহার পেয়ে এসেছি।’