বিপুল অঙ্কের দেনা পরিশোধে সাহায্য করে ছোট ভাই অনিলকে এবার রক্ষা করলেন ‘বিগ ব্রাদার’ মুকেশ আম্বানি। জানা গেছে, ভারতীয় শিল্পপতি অনিল আম্বানির রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের কাছে ৪৫৮.৭৭ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল সুইডিশ কোম্পানি এরিকসন। তারপরই সুপ্রিম কোর্ট খুব কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল, চার সপ্তাহের মধ্যে পাওনা না মেটালে জেলে যেতে হবে অনিল আম্বানিকে। সেই সময় ফুরনোর আগেই সোমবার এরিকসনের পাওনা মেটালেন অনিল।
এরপরই এক বিবৃতি দিয়ে তিনি জানান, আমার দাদা মুকেশ আম্বানি ও বৌদি নীতা আম্বানিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা এই কঠিন সময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন। ঠিক সময়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। আমি ও আমার পরিবার তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা অতীতকে ফেলে এসেছি।
প্রসঙ্গত, একসময় ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ব্যবসা ছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স। ২০১৪ সালে এরিকসন ইন্ডিয়া তাই অনিলের রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের সঙ্গে সাত বছরের জন্য চুক্তি করে। সেই চুক্তিতে বলা ছিল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের মোবাইল নেটওয়ার্ক ম্যানেজ ও অপারেট করবে এরিকসন ইন্ডিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালে হঠাতই অনিলের সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে চুক্তিও ভঙ্গ হয়। এরপরই এরিকসনের তরফে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের কাছে আবেদন জানান হয়, তাদের পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তা ফেরাচ্ছিলেন না অনিল।
কেন তিনি এরিকসনকে পাওনা মেটাতে পারছেন না তার কারণ হিসাবে কোর্টে অনিল বলেন, বড়ভাই মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও-র সঙ্গে সম্পত্তি কেনাবেচা নিয়ে তিনি কোনও সমঝোতায় আসতে পারেননি। সেজন্য তাঁর কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোম্পানির তহবিল তাঁর হাতে নেই। তিনি ঋণ শোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
কিন্তু এরিকসন পাল্টা যুক্তি দেখায়, রাফাল যুদ্ধবিমান নির্মাণে বিনিয়োগ করার জন্য যদি অনিলের হাতে টাকা থাকে, তাহলে তিনি তাদের পাওনা মেটাচ্ছেন না কেন? উল্লেখ্য, রাফাল চুক্তিতে ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির অফসেট পার্টনার হয়েছে অনিল আম্বানির সংস্থা। যদিও বিরোধীরা ওই চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন।
এরপর গত ২৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট অনিলকে নির্দেশ দেয়, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এরিকসনকে পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে। না হলে বাৎসরিক সুদ দিতে হবে ১২ শতাংশ হারে। কিন্তু অনিল ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দেনা শোধ করেননি। সুপ্রিম কোর্ট তখন তাঁকে তিরস্কার করে বলে, ইচ্ছা করেই তিনি ঋণ শোধ করছেন না। তাঁকে এবং রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের অপর দুই ডিরেক্টরকে এক কোটি টাকা করে জরিমানা দিতে বলা হয়। অবশেষে, চাপের মুখে পড়ে সোমবার তড়িঘড়ি দেনা শোধ করে দেন অনিল।