উত্তরপ্রদেশ যার, দেশে সরকার তার— এই কথাটি প্রায় মিথ হয়ে গেছে। তাই দিল্লীর মসনদের জন্য উত্তরপ্রদেশ সব রাজনৈতিক দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মধ্যে হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যেই আসন সংখ্যাই সবেচেয়ে বেশি। মোট ৮০টি। তাই উত্তরপ্রদেশ থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে হোলির আগেই মোদীর খাসতালুকে অভিনব ভোটপ্রচার শুরু করছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। সোমবার গঙ্গায় দীর্ঘ ১৪০ কিলোমিটার জনসংযোগ যাত্রা করবেন কংগ্রেসের এই সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, এলাহাবাদ অর্থাৎ প্রয়াগরাজ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ নৌপথে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। গঙ্গার দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদের সঙ্গে একাত্ম হতে মাঝে মাঝেই থেমে যাবে তাঁর স্টিমার। কোথাও ছোট সভা, কোথাও বা শুধুই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনবেন তিনি। রয়েছে একাধিক মন্দির, দরগা পরিদর্শনের কর্মসূচিও। প্রিয়াঙ্কার ওই ভোটপ্রচার শেষ হবে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। কংগ্রেসের তরফে শুক্রবার বিকেলেই প্রিয়াঙ্কার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও তখনও নৌবিহারের অনুমতি মেলেনি।
তবে শনিবার রাতেই অনুমোদন দিয়ে দেয় পুলিশ-প্রশাসন। যার পর রবিবার লখনউ পৌঁছেছেন প্রিয়াঙ্কা। জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে তাঁর জলপথে যাত্রা। কংগ্রেস সূত্রে খবর, একাধিক স্টিমার বোট সহ যাত্রা করবেন প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে থাকবেন কংগ্রেসের অন্যান্য নেতা-কর্মীরাও। প্রিয়াঙ্কার সফর ঘিরে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রয়াগরাজ থেকে বারাণসী, ১৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ জলপথে গঙ্গার দুই তীরে রয়েছে এমন জনপদ, যা উত্তরপ্রদেশে ভোটের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয়। এঁরা মূলত নিম্মবর্গীয় এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত গোষ্ঠী। লোকসভা ভোটের মুখে জনসংযোগ বাড়াতে এই সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করবেন প্রিয়াঙ্কা। পাশাপাশি, মোদী জমানায় কী আশা ছিল, তার কতটা পূরণ হয়েছে বা হয়নি— সেসব কথাও শুনবেন তিনি।
তবে এখানেই শেষ নয়। মোদী জমানায় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ চালু হয়েছে। গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু গঙ্গা কি আদৌ নির্মল হয়েছে? কংগ্রেস সূত্রে খবর, ভোটারদের এই প্রশ্ন করতে চান প্রিয়াঙ্কা। কারণ, এই প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে— সেটা গঙ্গা তীরবর্তী জনপদই সবচেয়ে ভাল জানবেন। তাই এই প্রকল্পে যাঁদের সবচেয়ে বেশি এবং প্রত্যক্ষ সুবিধা পাওয়ার কথা, সেই গঙ্গা তীরবর্তী মানুষজন কি আদৌ সেটা পেয়েছেন, সেই সব বিষয় নিয়েও চর্চা করবেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা।
উল্লেখ্য, বিগত পাঁচ বছর ধরে বারাণসীর সাংসদ নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রে খবর, এবারও এই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন মোদী। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রিয়াঙ্কার গঙ্গাবিহারও শেষ হচ্ছে এই বারাণসীতেই। সেখানে একাধিক মন্দির দর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাধু-সন্ত এবং স্থানীয়দের সঙ্গে জনসংযোগ। এ ছাড়া বারাণসীতেই একটি হোলি মিলন উৎসবেও যোগ দেবেন তিনি। ফলে খোদ মোদীর কেন্দ্রে গিয়েই এবার মোদীকে টেক্কা দিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা।