লোকসভা ভোট ঘোষণার সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, বাংলায় ৭ দফা লোকসভা ভোট গ্রহণের সঙ্গেই সমান্তরাল ভাবে হবে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ এবং হাওড়া উলুবেড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। যে এলাকায় যেদিন লোকসভা ভোটগ্রহণ, সেদিনই হবে সংশ্লিষ্ট বিধানসভার ভোটগ্রহণ। সেই হিসেবে ২৯ এপ্রিল কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন।
তাই আর কালবিলম্ব না করে কৃষ্ণগঞ্জ থেকে মতুয়া সংগঠনের নেতা প্রমথরঞ্জন বসুকে তৃণমূলের প্রার্থী করে মাস্টারস্ট্রোক দিল দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ এর ফলে মতুয়া ভোটে থাবা বসাতে পারবে না বিরোধীরা। বরাবরই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রমথরঞ্জন বাবুর এলাকায় যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তাই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারবে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।
প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস আততায়ীদের গুলিতে খুন হন। এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপির একাধিক নেতা-কর্মী। বিধায়ক খুনে বিজেপির নদিয়া(দক্ষিণ) জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারকেও সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাই খুনের ঘটনার পর কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায় বিজেপি এখন বেশ ব্যাকফুটেই।
উল্লেখ্য, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন ও লোকসভা ভোট একইদিন একইসঙ্গে হওয়ায় এই বিধানসভা অঞ্চলের ভোটাররা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দু’টি ইভিএমে বোতাম টিপবেন। একটি লোকসভার, অন্যটি বিধানসভা উপনির্বাচনের। এবং উভয় ভোটেরই ফলপ্রকাশ হবে ২৩মে। উপনির্বাচনে এখনও পর্যন্ত শাসকদল ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক দলই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তাই প্রার্থী হিসেবে মতুয়া সংগঠনের নেতার নাম ঘোষণা করে অনেকটাই এগিয়ে গেল তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, প্রমথরঞ্জনবাবু বেনালি দুর্গাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি(গণিত) ও এমএ(ইতিহাস)। মতুয়া মহাসংঘের নদিয়া জেলা সভাপতি ও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছর ধরে তিনি এই পদ সামলাচ্ছেন। ৬৭ বয়সি এই নেতার রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেস থেকে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ময়ূরহাট-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলে যোগদান করেন।
তৃণমূলের এসসিএসটি সেলের ব্লক সভাপতি পদেও প্রমথবাবু দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন। সেইসঙ্গে এসসিএসটি সেলের জেলা সহ সভাপতির পদও সামলাচ্ছেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরই বৃহস্পতিবার থেকে প্রচার শুরু করেছেন প্রমথবাবু। রবিবার মাজদিয়া তালদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে গিয়ে তিনি বলেন, সত্যজিৎ এই এলাকায় জনপ্রিয় বিধায়ক ছিলেন। তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করাই আমার লক্ষ্য। ভোটারদের বলছি, উন্নয়নের নিরিখেই আমাকে ভোট দিন।
তিনি আরও বলেন যে, আসামে এনআরসি রিপোর্টের পর ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষ আতঙ্কিত হয়ে আছেন। বিজেপি দল ওপার বাংলার মানুষকে তাড়াতে চায়। আমরা বলছি, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠনে মমতা দিদি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করলে ওপার বাংলা থেকে আসা কাউকে ফিরে যেতে হবে না। তাছাড়া মতুয়াদের উন্নয়নের জন্য তৃণমূল সরকার মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেছে। মতুয়াদের উন্নয়নের কথা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভাবেন, অন্য কেউ না।
এদিকে, কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনে বিরোধী কোনও দলই এখনও পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। অন্যদিকে, প্রার্থী নির্বাচনেই তৃণমূল বিরোধীদের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।