অর্জুন নিজেকে বিহারীদের মসীহা ভেবে বসেছিল। বাংলার বিহারী সমাজের একছত্র অধিপতি মনে করেছিল নিজেকে। এই দু দিন ধরে একটি সার্ভে করা হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য জুড়ে। একদিকে যেমন সাধারণ বিহারী শ্রমিক, মজুরদের সাথে কথা বলা হয়েছে, অন্যদিকে শিক্ষিত সম্প্রদায় অফিস কেরাণী বিহারীদের সাথেও বিস্তর কথা হয়েছে, তার সাথে কথা হয়েছে বিভিন্ন বিহারী সংগঠন এবং সাধারণ গৃহবধূ, ছাত্রছাত্রীদের সাথেও। রাষ্ট্রীয় বিহারী একতা মঞ্চ, পশছিম বঙ্গাল বিহারী সমাজ, ভোজপুরী একতা মঞ্চের মানুষ জনের সাথেও কথা হয়েছে যেমন, তেমনিই কথা হয়েছে মিথিলা সমাজের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে।
একটা কথা বলা যায়, অর্জুন রাজ্য বিধানসভায় অবশ্যই বিহারী মুখ ছিলেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক বিহারী তাকে সমীহ করতেন কিছুটা। কিন্তু বিহারের মানুষ জন, যারা এই রাজ্যে রুটি রুজির জন্য এসেছেন কিম্বা স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁরা কেউই “অর্জুন ভাইয়ার’ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণার পরে দিদির হাত ছেড়ে বিজেপীতে যাওয়াটাকে নীতিশ কুমারের গদ্দারির সাথে তুলনা করছেন। নীতিশ যেভাবে বিহারের ভোটারদের বিজেপী বিরোধী ভোটে জিতে বিহারীদের সাথে বেইমানি করে বিজেপীতে গিয়েছেন শুধু ক্ষমতার লোভে, সেই ভাবেই অর্জুনকে দেখছেন বাংলার বিহারী সমাজ। যোগেশ্চন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অনুজ যাদবের কথায় গোটা বিহারীদের বেইমান সাব্যস্ত করলেন অর্জুন সিং। আর এক দিন মজুর মনোজ মৌর্য বললেন, বাংলায় বিহারীরা যত মান সম্মান পেয়ে থাকেন এতটা সম্মান দেশের আর কোথাও তাঁরা পান না। এমন কি বিহারেও না, উত্তর প্রদেশেও না। সুমন পাণ্ডে একজন সাধারণ গৃহবধূ, স্বামী বড় বাজারে কেরাণীর চাকরী করেন, সুমন জানালেন, এই রাজ্যে দিদিই প্রথম ছট পুজোয় দু দিন ছুটি দিয়েছেন সূর্যদেবের পূজার্চনার জন্য, খোদ বিহারেও এই ছুটি নেই। আর একজন কাউন্সিলর হাওড়া কর্পোরেশনের, তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসের বালীর সভাপতিও, তিনি তফজিল আহমেদ। দু পুরুষ আগে তাঁদের বাংলায় আগমন। তারপরে বাংলার জল হাওয়ায় বেড়ে ওঠা। তিনি বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষকে জনপ্রতিনিধি করেছেন, নেতৃত্বের সামনের সারিতে এনেছেন, তা ভূভারতে আর কেউ করেনি। এখানের বাঙালীরাও আপন করে নিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা মানুষজনকে। অর্জুন সিংয়ের মত লোকেরা ক্ষমতা লোভী। কিন্তু সাধারণ বিহারীরা ক্ষমতার লোভী নয়, এই অর্জুন সিংদের শরীরে প্রকৃত বিহারীর রক্ত নেই। এই রকম ক্ষমতালিপ্সুদের সাধারণ বিহারীরা সমর্থন করে না। আর এক বিহারী সিপিএম নেতা জগদীশ সিংও বললেন, বিহারীরা বেইমান হয় না, বিহারী ইমানদার জাতি। অর্জুন সিংয়ের মত লোকেরা বিহারী জাতির কলঙ্ক।
সাধারণ বিহারীরা নিজেদের অর্জুন সিংয়ের সাথে নিজেদের জড়াতে চাইছেন না। আম বিহারী খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর সাথে ছটে ছুটি পেয়ে ‘বঙ্গালকে শেরনী” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই নিজেদের আস্থা জ্ঞাপন করছেন। কেউ একজন সাংসদ হবার লোভে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে গদ্দারি করতেই পারেন, আপামর বিহারীরা মমতার সাথেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিহারী বলতে শুধু বিহার থেকে আসা মানুষ জনের কথা নয়, এখানে বিহারী বলতে সমগ্র বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর প্রদেশ থেকে আগত সকলের কথা বলা হয়েছে।
মতামত লেখকের ব্যাক্তিগত