ঠিক লোকসভা ভোটের আগেই ডিগবাজি খেয়ে ‘বাম’ ছেড়ে ‘রাম’-এর শরণ নিয়েছেন তিনি। হবিবপুরের সিপিএম বিধায়ক হয়েও লোকসভার টিকিট পাওয়ার আশায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন খগেন মুর্মু। কিন্তু তাঁর সে আশায় জল ঢালতে উঠেপড়ে লেগেছে খোদ বিজেপির নেতা-কর্মীরাই। খগেন মুর্মুকে উত্তর মালদহের লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী করলে তা মানা হবে না, এমন কথা লিখে পোস্টার পড়ল এবার উত্তর মালদার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায়।
রবিবার সকালে উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের গাজোল, পুরাতন মালদহ এমনকি খগেন মুর্মুর বিধানসভা এলাকা হবিবপুরেও এই পোস্টার দেখা যায়। কোনও পোস্টারে লেখা, ‘যার চার চারটি বউ, তাকে আমরা ভোট দেব না কেউ।’ আবার কোনও পোস্টারে খগেনবাবুকে, ‘জমি মাফিয়া, বহু পত্নীক, হিন্দু সমাজের কলঙ্ক’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সব পোস্টারের দাবি এক। তাঁকে যদি উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করা হয়, তাহলে তা মানা হবে না। প্রতিটি পোস্টারের তলায় লেখা ‘উত্তর মালদা লোকসভা বিজেপি কর্মী।’ আর এই পোস্টার পড়ার পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
এই প্রসঙ্গে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক খগেন মুর্মু বলেছেন, ‘সিপিএম কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু দল সে কথা শোনেনি। তাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। সে জন্যই সিপিএমও আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে ব্যক্তি জীবনের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু সিপিএমের রাজনীতি এত নীচে নেমে গেছে যে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনার চেষ্টা করছেন তিনি। যদিও সিপিএম ও তৃণমূলের মতো দুটি ভিন্ন মতাদর্শী দল এক সঙ্গে মিলে এ কাজ করেছে, এ দাবি ঢোপে টিপছে না।
খগেন মুর্মুর আনা অভিযোগকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে মালদা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলার কার্যকরী সভাপতি তথা বিধায়ক নীহার ঘোষ বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন বিধায়ক খগেন মুর্মু বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। পোস্টারে তো ওঁর দল বিজেপির নামই লেখা আছে। নিজের দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঢাকতে খগেনবাবু এখন তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।’ তাঁদের দাবি, বিজেপি কর্মীরাই যে ওই পোস্টার টাঙিয়েছে, তা পরিষ্কার।
তবে মালদার বিজেপি সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র এই অভিযোগকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি এ কথা বলেন যে, ‘খগেন মুর্মু তো এখনও প্রার্থী হননি। তাই কেন তাঁকে ভোট দেওয়া বা না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি না।’ অর্থাৎ খগেনকে প্রার্থী করার ব্যাপারে গেরুয়া শিবির যে এখনও কিছু চূড়ান্ত করতে পারেনি, তা সঞ্জিতবাবুর কথা থেকেই স্পষ্ট। ফলে এর থেকে ধরে নেওয়াই যায় যে বিজেপির টিকিটে খগেনের প্রার্থী হওয়ার রাস্তায় কোনও রকম বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দলকে। এবং তা দলের জেলা নেতৃত্বের তরফ থেকেই।