‘২৩ মে যেদিন ভোটের ফলাফল বেরবে আপনারা দেখবেন, পদ্মফুল সরষেফুলে পরিণত হয়েছে।’ শুক্রবার বাঁকুড়ার সোনামুখীর কর্মীসভায় ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বিষ্ণুপুর লোকসভার অধীন ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের সমস্ত তৃণমূল কর্মীদের ওই সভায় ডাকা হয়েছিল। অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা, দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ, এবং জেলার বিধায়করা।
সভামঞ্চ থেকেই বিজেপিকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, প্রার্থী খুঁজতে বিজেপি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরছে। যারা ৪২টি প্রার্থী জোগাড় করতে পারছে না, তারা নাকি আবার স্বপ্ন দেখছে বাংলা দখলের! দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে জেলার তৃণমূল পর্যবেক্ষক বলেন, ‘প্রত্যেককে নিজ নিজ বুথ অতন্দ্র প্রহরীর মতো আগলে রাখতে হবে। বিজেপি, সিপিএম কিংবা কংগ্রেসকে এক ছটাকও জমি ছাড়া চলবে না। ২৩ মে যেদিন ভোটের ফলাফল বেরবে আপনারা দেখবেন, পদ্মফুল সরষেফুলে পরিণত হয়েছে। বড় গদ্দারের লেজ ধরে ছোট গদ্দারও যাচ্ছে। ওতে আমাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।’
সদ্য দলত্যাগী অর্জুন সিংকেও বিঁধতে ছাড়েননি অভিষেক। অর্জুনের উদ্দেশ্যে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘হিম্মত থাকলে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ুন। আপনাকে ২ লক্ষ ভোটে হারাব, কথা দিচ্ছি।’ আবার দল থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘উনি অনেক হম্বিতম্বি করেছিলেন। হুমকি দিয়েছিলেন পুলিশ অফিস নাকি ঘেরাও করবেন। কিন্তু দেড়মাস কাটতে চলল, এখনও বাঁকুড়ার মাটিতে পা রাখার ক্ষমতা হয়নি ওঁর। সাংসদ হয়ে বেশিরভাগ সময়টাই দিল্লীতে কাটিয়েছেন উনি। সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ পর্যন্ত করতে পারেননি। তাই যখন বুঝলেন, দল আর তাঁকে টিকিট দেবে না, তখনই দল ছেড়ে পালালেন। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে শ্যামল সাঁতরাকে দেখে নয়, মনে রাখতে হবে ভোটটা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।’
এরপরই অভিষেক বলেন, ‘৮ বছর ধরে এই রাজ্যের উন্নয়নের জন্য তিনি অমানসিক পরিশ্রম করে চলেছেন। উন্নয়নের সুফল বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। সবুজসাথী প্রকল্পে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ছাত্রছাত্রী সাইকেল পেয়েছে। সবুজশ্রী প্রকল্পে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ১৩১ জন শিশুকে চারাগাছ দেওয়া হয়েছে, গ্রামীণ আবাস যোজনায় দেড় লক্ষ মানুষ বাড়ি পেয়েছেন। নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে ৬ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সমব্যাথী প্রকল্পে ২৭ হাজার মানুষ সুফল পেয়েছেন। ৯৯ শতাংশ কৃষক পরিবারকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশ্ববন্দিত হয়েছে। উৎকর্ষ বাংলা এবং সবুজসাথী প্রকল্প দুটি ১১০০ প্রকল্প এবং ১৯০টি দেশকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। আমাদের নেত্রী যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সবকটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন তিনি।’
গতকাল, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকেও তুলোধনা করতে ভোলেননি তৃণমূলের যুব সভাপতি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘ওরা দেশের সমস্ত বিরোধী দলকে চমকে-ধমকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পারেনি। তাই সকলকে মনে রাখতে হবে, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন হল সাম্প্রদায়িক মোদী আর উন্নয়নের কান্ডারী মমতার মধ্যে লড়াই। এই লড়াই দিল্লী সরকারের জবরদখলের বিরুদ্ধে লড়াই।’