লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্বাগত জানাল তৃণমূল। শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বের হওয়ার সময় তৃণমূল নেতা তথা নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, নির্বাচনে তো সেন্ট্রাল ফোর্স আসবেই। বাহিনী আসবে, ভোটের পর চলেও যাবে। এতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। বরং ফোর্স দিয়ে যতবার ভোট হয়েছে, ততবারই জনসমর্থন বেড়েছে তৃণমূলের। ফিরহাদ আরো জানালেন, “দুঃখ হয় দিলীপদা’র জন্য’।
মুকুল রায়ের দলত্যাগ ইস্তক রাজ্য বিজেপির ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন ফিরহাদ। কটাক্ষের সুরও ছিল তাঁর গলায়। ফিরহাদ বলেন, দিলীপদাকে দেখলে দুঃখ হয়। রাজ্য বিজেপির অফিসটা শুধু সাইনবোর্ড হয়ে রয়ে গেল। সবই তো দিল্লি থেকে মুকুল রায় আর কৈলাস বিজয়বর্গীয় করছেন। কে কবে কখন জয়েন করবেন, কিছুই জানে না বঙ্গ বিজেপি। ফিরহাদ বলেন, তাই বাধ্য হয়েই এখানে বসে নানা রকম কথা বলে বিজেপিতে প্রাসঙ্গিক হতে চাইছেন দিলীপদা। তাঁর প্রতি সমবেদনা রইল।
অর্জুন সিংয়ের দলত্যাগ প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘যে যেখানে খুশি যেতে পারে। আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু বিজেপি একটা পুরোনো দল। দলে মুকুল রায়ের প্রভাব বেড়ে গেছে। এখন দিল্লি থেকে উনি সব করছেন। এখানে মুরলী ধর লেনের অফিসটা রাখার আর কী দরকার আছে? সব যোগদান হচ্ছে দিল্লিতে। দিলীপ ঘোষকে হজম করতে হচ্ছে। দিলীপবাবু ভয় পাচ্ছেন। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উনি এখানে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। বিজেপি–র পরিচিত মুখ রাহুল সিনহা, শমীক ভট্টাচার্য, রীতেশ তিওয়ারির মতো লোকেদের কোনও মূল্য আছে বলে তো দেখছি না। তৃণমূল থেকে যিনি গেছেন, তিনিই নেতৃত্ব নিয়ে নিয়েছেন।’
কেন্দ্রের অর্থসাহায্য নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবির জবাবে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘তিনি তো কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ নন। ফলে তাঁর পক্ষে রাজ্যে কী হচ্ছে বা না হচ্ছে সেটা জানারই কথা নয়। তিনি জানবেন কী করে? মেডিক্যাল কলেজ এবং রাজ্যের অন্যান্য সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যেভাবে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে তা যদি তিনি দেখেও না দেখার ভান করেন, তাহলে তো কিছু বলার নেই! আর রাজ্যকে শুধু কেন্দ্রই দেয় না, রাজ্য থেকে বড় অংশের অর্থ নিয়েও যায়। আগে ছিল প্ল্যানিং কমিশন, এখন নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগ তো কিছুই দেয় না। সবই তো বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়্যাল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মা উড়ালপুল, চন্দননগরে উড়ালপুল সবই রাজ্য সরকারকে করতে হয়েছে”। এরই সঙ্গে উপহাসের সুরে তাঁর প্রশ্ন, দিলীপ ঘোষ কে? বিজেপির একজন নেতা মাত্র। তিনি না কেন্দ্র, না রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। তাঁর অস্তিত্ব কোথায়? একজন ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ রাজ্য সভাপতি!
রাজ্যের সব বুথকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করা হোক, এই দাবি নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেই কেল্লা ফতে, এহেন ধারণাও পোষণ করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদ সাহেব বলেন, সেন্ট্রাল ফোর্স বুথ পাহারা দেবে, সেটাই তো ওদের কাজ। মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আসুক। এমনিতেই এ রাজ্যে মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত। আর সে কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের প্রতি আস্থা রেখেই মানুষ বারবার তৃণমূলকে আর্শীবাদ করছেন। অপরদিকে, বিজেপির সমস্ত বুথ স্পর্শকাতর ঘোষণা করার দাবিকে , প্রকারান্তরে বাংলাকে অপমান করার শামিল বলেই মনে করছে জোড়াফুল শিবির। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে ধর্না শুরু করেছে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস। সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আজ, শনিবারও চলবে সেই কর্মসূচি।