জইশ-ই-মহম্মদের মুখপত্র হিসেবে আল-কালামকেই চেনে বিশ্ব। সেখানে জইশ প্রধান মাসুদ লেখেন ‘সাদি’ নামে। এই মুখপত্রের সাম্প্রতিক সংখ্যায় পুলওয়ামা কাণ্ড-সহ তার পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে লিখেছে ভারতের এই মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গী। বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় জইশ দলের কারও কোনও ক্ষতি হয়নি, সবাই ভালো আছেন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এই দাবি করেছে মাসুদ আজহার। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে মাসুদ বলেছে,‘আমি নরেন্দ্র মোদীর মতো নই। আমি এক জন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। আমি নরেন্দ্র মোদীকে তিরন্দাজি অথবা শুটিং প্রতিযোগিতায় নামার আহ্বান জানাচ্ছি। তা হলেই বোঝা যাবে কে বেশি ফিট”।
সম্প্রতি তিনি লেখেন, “বালাকোটের হামলা নিয়ে যেসব কথা লেখা হয়েছে, সব মিথ্যে। কারও কিছু হয়নি। সবাই ভালো আছে”। এরপরই লিখেছেন, “কাশ্মীরে আগুন জ্বালানো শুরু করেছেন আহমেদ আদিল দারের মতো কাশ্মীরের মানুষরাই। এই আগুন সহজে নিভবে না। কাশ্মীরের এই লড়াই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই লড়াই ধীরে ধীরে কাশ্মীর থেকে ভারতের অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে। গোটা ভারতে আগুন জ্বলবে”। ভারতের প্রসঙ্গ বাদে মাসুদ লিখেছেন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতির কথা। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যুবকদেরই জইশ-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মাসুদের দাবি, পৃথিবী জুড়ে তার স্বাস্থ্য নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তা আসলে কোনো উদ্দেশ্যগত প্রচার। তার কথায়, “গত ১৭ বছর ধরে অসুস্থতার জন্য জইশের কেউ হাসপাতালে যায়নি। কখনও কোনও চিকিৎসকেরও প্রয়োজন পড়েনি”। ।কারণ সে ‘কোরান’ নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। এই কারণে মানসিক উত্তেজনা বা ডায়াবিটিস থেকেও সে সম্পূর্ণ মুক্ত।
পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়েও নিজের পুরনো অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ। পুলওয়ামার ভয়াবহ নাশকতার নিন্দায় যখন মুখর সারা বিশ্ব, তখন জইশ প্রধান মাসুদের দাবি, “এই নাশকতা আসলে স্বাধীনতার যুদ্ধ। কাশ্মীরিদের হৃদয়ে আগুন জ্বেলে দিয়েছে পুলওয়ামার আত্মঘাতী যুবক আলি আহমদ দার। এই আগুন সহজে নিভবে না। তা ছড়িয়ে পড়বে সারা কাশ্মীরে”।
জম্মু-কাশ্মীরে ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গী হামলার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জইশ জঙ্গি ঘঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান। এরপরই জানা যায় যে টার্গেট ছিল, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। জানা যায়, মাসুদ আজহারের তিনজন আত্মীয় নিহত হয়েছে এই হামলায়। আরও শোনা যায়, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নাকি হাসপাতালে ভর্তি মাসুদ। যদিও পাকিস্তানের তরফে দাবি করা হয়, কোনও ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি এই বিমান হামলায়। এরপর পাক বায়ুসেনাও ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করে। জবাব দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। এই লড়াইয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার এক জওয়ান অভিনন্দন বর্তমান পাক রেঞ্জার্সদের হাতে ধরা পড়েন।দু’দিন বাদে ভারতে ফেরেন অভিনন্দন। সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। এর মধ্যেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের মুখপত্র আল-কালাম- এ এই দাবিই করল পুলওয়ামা কাণ্ডের মূল চক্রী মাসুদ আজহার।