১৯৯৯-এ মাসুদকে ছাড়ানোর জন্য ভারতের যাত্রিবাহী বিমানকে হাইজ্যাক করে কন্দহরে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গীরা। যাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে মাসুদকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত সরকার। ঠিক তারপর থেকে ভারতে একের পর এক জঙ্গী হামলা চালিয়েছে মাসুদ। সংসদে হামলা, উরি এবং সবশেষে এ বছরে পুলওয়ামায় হামলা চালায় জইশ। যার জেরে ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়। কিন্তু এর পিছনে আছে অনেকগুলো গল্প।
সালটা ছিল ১৯৯৪। তখন তদন্তকারীদের জেরার মুখে তখন মাসুদ স্বীকার করেছিল কী ভাবে ভারতে এসেছে, কোথায় ছিল, কাদের সঙ্গে দেখা করেছে। সম্প্রতি সেই তথ্যই সামনে এসেছে। ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে পর্তুগাল নাগরিক পরিচয় দিয়ে উত্তর ভারতের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে সে। এমনকি দিল্লীর ভিভিআইপি এলাকাতেও থেকে গিয়েছে তা কাক-পক্ষীতেও টের পায়নি! তারপর শেষ রক্ষা হয়নি। কাশ্মীরে গিয়েই ধরা পড়েছিল জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহার। তারপর তাঁর পাঁচ বছর জেল হয়। ভারত সরকার বাধ্য হয়ে তাঁকে ১৯৯৯ সালে ছেড়ে দেন।
তদন্তকারীদের মাসুদ জানিয়েছিল, ১৯৯৪ সালে পর্তুগাল থেকে ভুয়ো পাসপোর্ট বানিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ গিয়েছিল সে। পাসপোর্টে তার পরিচয় ছিল ভালা অ্যাডাম ইসা। বাংলাদেশে দু’দিন থাকার পর ভারতে এসেছিল সে। দিল্লীর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সেন্টারে চেকিং চলাকালীন মাসুদের চেহারা দেখে সন্দেহ হয়েছিল দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। ছলে-বলে তাঁদেরকে মাসুদ বোঝায় পর্তুগীজ নাগরিকত্ব থাকলেও সে ‘গুজরাত জন্মজাত’। দিল্লীর চাণক্যপুরীর কাছে অশোক হোটেলে সে প্রথম মাথা গোঁজে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই দিন রাতে আশরফ দার নামে এক কাশ্মীরিকে মাসুদ ফোন করে অশোক হোটেলে আসতে বলে। হরকত-উল-আনসার জঙ্গিগোষ্ঠীর এক সদস্য আবু মেহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই অশোক হোটেলে আসে আশরফ।
এরপর নানা জায়গা ঘুরে ৮ ফেব্রুয়ারি নিজামুদ্দিনে তাবলিক-উল-জামাত সেন্টারে যায় মাসুদ। কিন্তু কারও সঙ্গে দেখা করেনি সেখানে। তবে ফেরার পথে নিজামউদ্দিন থেকে ১২টা কম্পাস কিনেছিল কাশ্মীরের জঙ্গিদের উপহার দেওয়ার জন্য। জেরায় মাসুদ এমটাই জানিয়েছিল, দাবি তদন্তকারীদের। এখান থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরে যাওয়ার বিমানের টিকিট ছিল তার। মাসুদ তদন্তকারীদের জানায়, যে হেতু তার হাতে অনেকটাই সময় ছিল তাই ওই সময়ের মধ্যে আরও কয়েকটা জায়গা ঘুরে আসার পরিকল্পনা করে সে।
৯ ফেব্রুয়ারি আশরফ দার মাসুদকে শ্রীনগরে নিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় হরকত-উল-জিহাদ অল-ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠির সদস্য সাজ্জাদ আফগানির সঙ্গে দেখা করে মাসুদ। ১০ ফেব্রুয়ারি আফগানির সঙ্গে মাটিগুন্দে যায় মাসুদ। সেখানে পাকিস্তানের সব জঙ্গী একত্রিত হয়েছিল। মাটিগুন্দ থেকে আফাগানি এবং ফারুক মানে দুই জঙ্গির সঙ্গে ফেরার পথে তাদের গাড়িতে সমস্যা হয়। তখন একটা অটোরিক্সায় উঠে অনন্তনাগের দিকে যাওয়ার সময় পথেই তাদের আটকায় ভারতীয় সেনা। সেনাদের দেখেই ফারুক গুলি ছুড়তে শুরু করে। ফারুক পালাতে সক্ষম হলেও ধরা পড়ে মাসুদ ও আফগানি।
মাসুদকে আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু বারবার তাতে জল ঢেলে দিচ্ছে চিন। আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ শক্তিশালী দেশ গুলোর সমর্থন পেলেও চিন এই বিষয়ে প্রতি বার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।