নিজের চোখে বিকাশ দেখেছেন কখনো? বৃদ্ধি কাকে বলে দেখেছেন? আমি দেখেছি। দেখুন হাঁ করে বিকাশ তাকিয়ে আছে ছ’জন লাশের বিনিময়ে। বানিজ্য নগরীর চল্লিশজন আহত মানুষের পাঁজরে। রক্তের দাগে।

ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাই এ আবার একটা ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে পরলো। মানে দুম করে ভেঙে পরলো। আবার কয়েকটা মানুষ বেঘোরে মারা গেল৷ অফিসটাইম শেষে বাড়ি ফিরবে বলে ব্রিজে চড়েছিল এরা। বাড়িতে বউ, মা বা মেয়ে অপেক্ষায় ছিল। কখন বাড়ি ফিরবে, হাতমুখ ধোবে বা এক গেলাশ জল চাইবে বা স্রেফ রিমোট হাতে চ্যানেল চেঞ্জ করবে। ঘরের লোকেদের আজ রাতে হাসপাতালে যেতে হবে। কাল লাশকাটা ঘর থেকে ঠান্ডা শরীরটা নিয়ে বাড়ি। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। মুম্বাইয়ের স্পিরিট মেনে আবার জীবন চলবে বা ছুটবে।
মুম্বাই একটি স্বপ্নের নাম। এখানে রোজ একটা করে সাফল্যের গল্প লেখা হয়৷ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ২০% থাকে। আকাশে টাকা ওড়ে। বিশাল বিশাল ইমারত, চোখধাঁধানো তারকাগলি। এখানে স্রেফ পদপৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা যায়। গাছ পরে মারা যায়। এখানে রাস্তার খোলা ম্যানহোলে ভেসে যায় লোক। গুলি খায় বিয়ারে চুমুক খেতে খেতে কোন পাবে।

এখানে এসবের পরে ও বিজেপি নেতা সঞ্জু বর্মা বলে ফুটব্রিজের ঘটনার দায় পথচারীদের নিতে হবে। দোষ তাদেরই। যে ব্রিজে ১০জন যেতে পারে তাতে কেন ৬০জন যাচ্ছিল। তিনি টাইমস নাও চ্যানেল এ বসে এও বলেন যে এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ! দুর্যোগই বটে তবে আমাদের রাজনৈতিক বোধের।
আমরা শান্ত থাকি। কারণ আমরা ভারতের সবচেয়ে ধনী শহরে থাকি। আমরা কেউ প্রশ্ন করিনা কেন পূরসভার রিপোর্টে ব্রিজের হাল ঠিকঠাক আছে বলা থাকলে ও এরকমভাবে ব্রিজ ভেঙে পরে। কে টাকা খেল? কার দেখার কথা ছিল? আমরা প্রশ্ন করিনা। লাশের পাহাড় থেকে নেমে এসে মোমবাতি জ্বালাই আর পাকিস্তান মুর্দাবাদ বলে চেঁচামেচি করি।
ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসের কাছে ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে পরলো৷ ছটা প্রান স্রেফ এমনি মারা গেলো। আমরা অবশ্য সারে তিনশো কোটি টাকা দিয়ে ছত্রপতি শিবাজীর বিশাল মূর্তি নির্মাণ নিয়েই বেশী উৎসাহী।
কারণ সবকা বিকাশ তাকিয়ে আছে সবকটা চাপা পরে মারা যাওয়া লাশের দিকে। আর আপনি তাকিয়ে আছেন কবে আপনার একাউন্টে পনেরো লাখ টাকা আসবে আর আপনি নিজেই আপনার চলার পথের ফুটব্রিজ গুলো মেরামত করে নেবেন যাতে বাড়ি ফিরে এসে টিভি চালিয়ে যুদ্ধ দেখতে পারেন৷
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত