চলচ্চিত্রের রূপোলী পর্দা থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান। এবারের লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী তিনি। নাম ঘোষণার পর থেকেই নেমে পড়েছেন প্রচারে। বৃহস্পতিবার মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের জেলা অফিসে প্রথম নির্বাচনী বৈঠক করে তিনি বললেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় বলেছেন, জিতে এসো। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি। তবে পুরোদস্তুর ভোটযুদ্ধে নামার আগে এলাকার নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচিত হলেন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী নুসরত জাহান। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় বাবা শাহজাহানকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে পৌঁছন তিনি। তৃণমূল কার্যালয়ে নুসরতকে ‘মা-মাটি-মানুষ’ লেখা দলীয় উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
মধ্যমগ্রামের অফিসে বৃহস্পতিবার নুসরত আসছেন শুনেই সকলের মধ্যে উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। আশপাশের লোকজনও ভিড় জমিয়েছিলেন সামনে থেকে অভিনেত্রীকে একটিবার দেখার জন্য। দুপুর ১টা নাগাদ শাড়ি পরে তিনি পার্টি অফিসে আসেন। বৈঠকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় নেতাদের ডাকা হয়েছিল। জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সকলের সঙ্গে নুসরতের পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার নির্বাচনী বৈঠক।
বসিরহাটে ভোটের প্রচার করতে বা সেখানকার মানুষের সঙ্গে কাজ করতে তাঁর যে কোনও অসুবিধা হবে না, এ দিন তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন নুসরত। যা শুনে বসিরহাট থেকে আসা দলীয় নেতা-কর্মীদের চোখেমুখে স্বস্তি দেখা যায়। বসিরহাটের এক নেতার কথায়, ‘‘প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা খুবই ইতিবাচক। আশা করছি গতবারের থেকেও এ বার বেশি ভোটে জিতব। গতকাল পোড়খাওয়া নেত্রীর মতো নুসরত বলেন, ‘‘কী ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমরা নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা মেনে উন্নয়নের জন্য কাজ করি। সেভাবেই কাজ করব।’’ রাজনীতির ময়দান সম্পূর্ণ আলাদা জায়গা, কী ভাবে মানিয়ে নেবেন এ প্রশ্নে নুসরত বলেন, ‘‘প্রথম যেদিন অভিনয় জগতে পা দিয়েছিলাম, সেদিনও কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বেড়েছে। এখানেও তেমনই হবে।’’
নুসরত আরো জানিয়েছেন, “বসিরহাটে প্রচুর অনুষ্ঠান করেছি। তবে, এখন একটু অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। দিদির পাশে সব সময় থেকেছি। আগে যখন পার্টির সদস্য ছিলাম না, তখনও পাশে ছিলাম। কারণ, উনি মহিলা হয়েও একা লড়াই করে গিয়েছেন। তাই একজন মহিলা হয়েই ওনার পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা যে নারীশক্তির জাগরণের কথা বলি, দিদি হলেন তার বড় উদাহরণ। আজ সরাসরি দলে এসে সত্যিই ভাল লাগছে!”
বসিরহাটে লড়াইয়ের প্রসঙ্গে হাসিমুখে নুসরত জানান, লড়াই তো প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কঠিন। জীবনে, সিনেমায় সবেতেই লড়াই আছে। আবার রাজনীতিতেও লড়াই আছে। জীবনের প্রত্যেক লড়াইয়ে জিতে এসেছি। তাই এটাকে আলাদাভাবে লড়াই দেখছি না। আগে ছবির প্রচারে মানুষের কাছে যেতাম। এখনও মানুষের সামনে যাব। তবে, আরও বিশাল দায়িত্ব নিয়ে। এখন তাঁদের জন্য ভালো কিছু করতে পারব এবং তাঁদের পাশেও থাকতে পারব।
১৯ মার্চ সন্দেশখালি থেকে শুরু করে মিনাখা, হাড়োয়া ছুঁয়ে শেষ হবে প্রথম দিনের প্রচার। পরেরদিন উত্তর এবং দক্ষিণ বসিরহাটে যাবেন তিনি। করা হবে রোড শো, মিছিল। তবে সারাদিন প্রচার করে কলকাতা ফেরা সম্ভব নয়, তাই ইছামতীর ধারে এক সুন্দর বাড়িতে থাকবেন তিনি। গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস-সহ আরো অনেকে।