নেথান লায়নকে কভারে ঠেলে একটা রান নিয়ে রোহিত শর্মা যখন ওয়ান ডে ক্রিকেটে আট হাজার রান পূর্ণ করল, তখনও ম্যাচটা ভারতের হাতে ছিল। কিন্তু অ্যাডাম জ়াম্পার করা ২৯তম ওভারে রোহিত এবং রবীন্দ্র জাডেজা আউট হওয়ার পরেই ভারত ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টি২০ সিরিজ হারলেও আইসিসি’র টি–২০ র্যাঙ্কিং-এ দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখল ভারত।
সিরিজ হারতে হল, ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও। ‘শিশির’–এর কারণে ৩৫৮ রান বোর্ডে থাকা সত্ত্বেও ম্যাচ জেতা যায়নি মোহালিতে। বুধবার ২৭২ রান তোলার লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারল না টিম ইন্ডিয়া। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতল ৩–২ ব্যবধানে। এর আগে, ভারত কখনও ২–০ ব্যবধানে এগিয়েও সিরিজ হারেনি। তেমনই, অস্ট্রেলিয়া ০–২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩–২ ব্যবধানে জিততে পারেনি। স্রেফ নিজেদের শক্তিশালী ভাবতে গিয়ে টিম ইন্ডিয়া তুচ্ছকে করে দিল মহার্ঘ। ছোট ছোট পায়ে অস্ট্রেলিয়া যে নিঃশব্দে এগোচ্ছিল, সেটা বুঝেও বুঝতে চায়নি ভারতের ‘সর্বকালের সেরা’ দল।
সবচেয়ে বেশি রান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ওসমান খোয়াজা (৩৮৩ রান)। ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান বিরাট কোহলির (৩১০)। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন প্যাট কামিন্স (১৪ উইকেট) এবং এঁরা এমন সাফল্য পেলেন অপরিচিত ভারতের পরিবেশে। অভিজ্ঞতার ঝুলি ফাঁকা। শুরু থেকে যাঁদের আটপৌরে দল হিসেবে মনে হয়েছিল, তাঁরাই কিনা অসাধারণ উন্নতি করে ড্যাং ড্যাং করতে করতে সিরিজ জিতে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। প্রথমে ২–০ ব্যবধানে টি২০ সিরিজে জেতার পর একদিনের সিরিটজাও জিতে নিলেন ফিঞ্চরা। বিড়াল থেকে বাঘ হয়ে ওঠার যেসব গল্প আমরা ঈশপের বইতে পড়েছি, সেখানে, সচ্ছন্দে এবং অস্ট্রেলীয়দের উন্নতির গল্প ঢুকে যেতে পারে। অনেকটা মেঘ ভাঙা রামধনুর মতো এই উত্থান।
বিশ্বকাপের আগে এটাই ছিল ভারতের চূড়ান্ত মহড়া। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’টো টি-টোয়েন্টি এবং পাঁচটা ওয়ান ডে ম্যাচের পরেও কিন্তু কয়েকটা প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না। অম্বাতি রায়ডু ব্যর্থ হওয়ার পরে চার নম্বর জায়গায় কোনও নাম এখনও চুড়ান্ত হতে পারল না। কে এল রাহুল এই ম্যাচে না খেলায় ওয়ান ডে সিরিজে ওর পরীক্ষা হল না। ঋষভ পন্থও পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ। বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরে কে খেলবে? এই দলে নতুন ফিনিশার হিসেবে সত্যিই কি কেউ উঠে আসছে?
কোটলার এই ম্যাচটা ছিল ঋষভের পরীক্ষা। ঘরের মাঠে একটা ভাল ইনিংস কিন্তু ঋষভকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিতে পারত। বুধবার কোহালি আউট হওয়ার পরেই দেখা যায় ব্যাট করতে নামছে ঋষভ। অর্থাৎ তরুণ এই ক্রিকেটারকে যতটা সম্ভব বেশি ব্যাট করার সুযোগ দিতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ঋষভ শুরুটা খারাপ করেনি। কিন্তু একটা চার, একটা ছয় মেরে ১৬ বলে ১৬ করার পরে আউট হয়ে গেল। তবে এ দিন ঋষভ উইকেট ছুড়ে দেয়নি। লায়নের অসাধারণ একটা বলে আউট হল। বলটা লেগ-মিডল স্টাম্পে পড়ে, স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে বাঁ হাতি ঋষভের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে চলে যায়। লায়নের এ দিনের বোলিং দেখে মনে হচ্ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে লাল বলের বোলিং করছে। অর্থাৎ, ওয়ান ডে-তে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আদর্শ অফস্পিন বোলিং। অ্যাকশন, লুপ, ডেলিভারি সব কিছুই নিখুঁত। তবে এত কিছুর পরেও সিরিজ হাতছাড়া হল ভারতের। যদিও কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াড তৈরি। কিন্তু তবুও এই ভুল ত্রুটিই সিঁদুরে মেঘ ঘনিয়ে আনছে ভারতের আকাশে।