‘নীতি-আদর্শ ওসব পরে ভাবব। যে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিতবে, তাকেই এবার প্রার্থী করা হবে। ২২টা আসন চাই-ই।’ সোমবার দিল্লীতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দলীয় বৈঠকে ঠিক এই বার্তাই দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তাঁর কথায়, কোনও নীতি-আদর্শের তোয়াক্কা না করেই এবারের ভোটে লড়বে বিজেপি। কারণ জয়ের নিশ্চয়তাই লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার একমাত্র শর্ত। মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেন যে, ‘অমিত শাহ বলেছেন, যে জিতবে, সে-ই প্রার্থী হবে। কেন্দ্রে সরকার গড়তেই হবে। এটাই এখন একমাত্র নীতি।’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল এবং কংগ্রেস থেকে বেশ কয়েক জন ‘নামী’ নেতা-নেত্রী বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হবেন বলে গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন চলছে রাজ্য দলের সদর দফতরে। জানা গেছে, এ নিয়ে সোমবারের বৈঠকে রাজ্যের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, যাঁরা বহু বছর ধরে দল করছেন, লোকসভার প্রার্থী বাছাইয়ে তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হোক। শুধুই যেন অন্য দল থেকে আসা বা ‘চমকপ্রদ’ ব্যক্তিদের প্রার্থী করা না হয়। এর উত্তরেই শাহ স্পষ্ট বলে দেন, ২০১৬ সালে নীতির কথা বলে যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছিল, নির্বাচনে তাঁরা বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারেননি। এবার আর সেই ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। একইসঙ্গে শাহ এ কথাও জানিয়ে দেন যে, লোকসভা ভোটের প্রার্থী নির্বাচন করবেন দিল্লীর নেতারাই। রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই সেখানে।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল বারবারই এই দাবি করে আসছে যে তাদের দল থেকে ঘাড়ধাক্কা খাওয়া ‘গদ্দার’ নেতাদেরই দলে টানছে বিজেপি। উল্লেখ্য, গতকালও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি আমায় বলতে পারতো, কিছু ধার দাও। প্রার্থী দিতে পারছি না। তাহলে কিছু গদ্দার পাঠিয়ে দিতাম।’ একইসঙ্গে তিনি এই কটাক্ষও করেন যে, ‘ধার চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। এ বার একটা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।’ এর আগে যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, তৃণমূলের উপড়ে ফেলা আগাছাদের বিজেপি মাথায় করে রাখে। এই দাবিকে ঠিক প্রমাণ করে দেন দিলীপ। তিনি বলেছেন, ‘হৃদয় এবং দলের দরজা আমরা আগেই বড় করেছি। ভোটে জিততে হলে নিতে হবে সকলকেই।’
অন্যদিকে, মমতা-সহ তাঁর দলের প্রতিটি নেতা-নেত্রীই এই অভিযোগ হামেশাই করে থাকেন যে বিজেপির কোনও নীতি-আদর্শ নেই। তারা শুধু সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে দাঙ্গা লাগাতে পারে। এবার সেই অভিযোগকেও একপ্রকার মান্যতা দিয়ে ফেললেন শাহ। কারণ তিনি নিজের মুখেই এবার স্বীকার করে নিলেন যে নীতি-আদর্শ নিয়ে ভাবতেই চান না তিনি। ‘যেনতেনপ্রকারেণ’ তাঁর ২২টা আসন চাই-ই চাই। তা বাংলায় দাঙ্গা লাগিয়েই হোক বা অন্যান্য দলের বাতিল ‘আগাছা’দের দলের প্রার্থী করে।