২০০৭ সালে তমলুকের নন্দীগ্রাম থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল তৃণমূল। বাম সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া জমি আন্দোলনের পরই মেদিনীপুরে তৃণমূলের জমি শক্ত হয়। এরপর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই কাঁথি-তমলুকে প্রার্থী হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন বর্তমান সাংসদ-দ্বয় শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী। এবারের লোকসভা ভোটেও সেই ‘বাবা-ছেলে’র জুটিতেই আস্থা রাখছেন মমতা। মঙ্গলবার প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পরই সে কথা স্পষ্ট হয়ে গেল।
প্রসঙ্গত, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে যে কাঁথিতে শিশির অধিকারী আর তমলুকে দিব্যেন্দু অধিকারীকেই মমতা প্রার্থী করবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। গতকাল বিকেলে দেখা গেল, প্রত্যাশা মতো ওই দুই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে বাবা ও ছেলের নামই ঘোষণা করলেন দলনেত্রী। আর নাম ঘোষণা হতেই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে জেলার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা নেমে পড়লেন ভোট প্রচারে।
প্রবীণ শিশির অধিকারীর রক্তেই রাজনীতি। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ সেই ১৯৫৮ সালে। পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা সামলে ২০০৯ সালে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রতীকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েই কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালেও কাঁথি থেকে নির্বাচিত হন তিনি। আর এবারও এই প্রবীণ নেতার ওপরই আস্থা রাখলেন দলনেত্রী। তিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বটে।
মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত শিশিরবাবু বলেন, ‘রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে মানুষের সমর্থন চাওয়া হবে। আমরা মানুষের পাশে বছরের ৩৬৫ দিন থাকি। তাই আমাদের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ কী কী বিষয় নিয়ে প্রচার চালাবে দল?
প্রবীণ সাংসদের জবাব, ‘কৌশলে ভোট হয় না। কৌশলে সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হয় না। যা সত্য, তাই আমাদের প্রচারের বিষয়। উন্নয়ন করেছি, উন্নয়নের কথা বলব। শান্তি ফিরেছে, শান্তি রক্ষার কথা বলব।’ সেইসঙ্গে, কাঁথির সামগ্রিক উন্নয়নেরও আশ্বাস দেন তিনি। বিরোধীদের তোয়াক্কা না করেই তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েকটা নির্বাচন এবং উপনির্বাচনেই স্পষ্ট বিরোধীরা কতটা দুর্বল। তাই ভোটের দফা বাড়িয়েও ফায়দা হবে না।’
অন্যদিকে, এবারও তমলুক লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে তমলুক কেন্দ্রেরই বর্তমান সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা স্নাতক দিব্যেন্দুরও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অনেক। সংসদীয় রাজনীতিতে ৪১ বছরের দিব্যেন্দুর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। ২০১৬ সালে দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক থাকা অবস্থাতেই তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জিতে প্রথমবার সাংসদ হন দিব্যেন্দু। দ্বিতীয়বারের জন্য এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন তিনি।
প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর কাঁথিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিব্যেন্দু বলেন, ‘এই ভোটের লক্ষ্য কেন্দ্রে স্থায়ী, জনমুখী ও ধর্ম-নিরপেক্ষ সরকার গঠন। আর আমাদের প্রচার বিষয় হবে দলের নীতি ও আদর্শ।’ ভোটে জয়ের ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই দিব্যেন্দুর। তিনি বলেন, ‘তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়াটা আমার কাছে নতুন ছিল। এবার সেটা আর নতুন নয়। আমার আড়াই বছরের কার্যকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। এবার মানুষের কাছে যাব, উন্নয়নের আর শান্তির কথা বলব।’