বিদেশী শাসকদের লবণ আইনের প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধী তার ঐতিহাসিক ডাণ্ডি মার্চ শুরু করেছিলেন ১৯৩০সালের ১২ই মার্চ। দেশজুড়ে বিজেপির কুশাসনের অবসান ঘটানোর জন্য বাংলার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন সেই ১২ই মার্চ। শুরু হল নির্বাচনী যুদ্ধে বিজেপিকে পরাস্ত করার কাজ। মানুষের রায় নিয়ে ডাণ্ডির উপকূলের বদলে এ মার্চ ২৩মে পৌঁছবে ভারতের জনসমুদ্রে। মানুষের রায়ে ক্ষমতার তখত থেকে পড়ে যাবে দেশকে গোল্লায় পাঠানো মোদি-অমিত ব্রিগেড। এক আশ্চর্য সমাপতন। এই মার্চে আমিও এক পদাতিক, কর্মীদের উদ্দীপনা, উৎসাহ দেখতে দেখতে চলবো। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকে শরিক হব এক অনন্য অভিজ্ঞতার। আজ এই ভোট যুদ্ধে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে এই মার্চের সূচনা করলেন দিদি। শুরুতেই এক ঐতিহাসিক ঘোষণা, দলে মহিলা প্রার্থীদের জন্য ৪১শতাংশ আসন সংরক্ষণ করল তৃণমূল। নারীদের লড়াই, অধিকারের স্বীকৃতি এভাবে দিদি ছাড়া আর কেই বা দিতে পারে?

সাংবাদিক সন্মেলনে দিদি বলেছেন, দেশে এক অঘোষিত এমারজেন্সি চলছে। গত পাঁচ বছরে সবদিক থেকে ব্যর্থ এই সরকার। বেকারদের কর্মসংস্থান হয়নি, বেড়েছে ফসলের দাম না পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা, বেড়েছে দলিতদের ওপর আক্রমণ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কণ্ঠরোধ করেছে এই সরকার। ওরা বদলে দিয়েছে দেশের ইতিহাস, সবমিলিয়ে তৈরি করেছে এক আতঙ্কের বাতাবরণ। ভোটে এদের হারানো না গেলে দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানো যাবে না। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং ইলেকশন, মোদি-অমিতদের হটাতেই হবে। দিদি জানালেন, ডিমনিটাইজেশনের নামে মোদি-অমিতরা মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন। এখন আমরা জানতে পারছি এব্যাপারে আরবিআইয়ের রেকমেন্ডেশনও অগ্রাহ্য করেছেন ওরা। আরবিআই ওদের একাজ করতে নিষেধ করেছিল।
এবারের তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নবীন ও প্রবীণের এক চমৎকার প্যাকেজ। এসেছে নুসরত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, রূপালি বিশ্বাসদের মত নতুন মুখ, আবার এর পাশেই রয়েছেন বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনাপতি ও দক্ষ প্রশাসক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতদাকে বাঁকুড়া থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোটা দিদির আরেক চমক। রূপালি বিশ্বাস নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী। ২৫বছরের রূপালি বিশ্বাসের শোককে আততায়ীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথে বদলে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। স্বামীর খুনীদের ভয় পাওয়ানোর রাজনীতির বিরোধিতা করতেই দিদি তাকে প্রার্থী করেছেন। রূপালির প্রার্থী হওয়ার সংবাদে সেখানে কর্মীদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ, উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। রূপালিদের পরিবার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট প্রচুর। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই কেন্দ্রে রূপালির বিজয় নিশ্চিত।

আমার খুব ভালো লাগলো সুব্রত বক্সীর কথা, তৃণমূলের একেবারে সূচনালগ্ন থেকে তিনি নীরবে, নিঃশব্দে সাফল্যের সঙ্গে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। একাজ আরও ভাল করে করার জন্য দক্ষিন কলকাতার নিশ্চিত আসনটি ছেড়ে দিলেন সুব্রত বক্সী। কোন হাঁকডাক, হৈচৈ না করে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কাজটি করে ফেলেন। এমন মানুষরা দলে এসেছেন বলেই নানা ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে আজ তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। এরাই হলেন দিদির যোগ্য সৈনিক। সাংগঠনিক বিষয়ে দিদিও খুব নির্ভর করেন সুব্রত বক্সীর ওপর।
সাংবাদিক সন্মেলনে দিদির শাড়িতে ঘাসের ওপর জোড়াফুলের ছবি দেখে আমার মনে পড়ছিল ১৯৯৭সালের কথা। সে বছর দিদি এঁকেছিলেন দলের এই প্রতীক। সঙ্গে স্লোগান হিসেবে ছিল নজরুলের কবিতা � মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান/ মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ। যারা দিদির ছবি নিয়ে নোংরা কুৎসা করে তাদের জেনে রাখা উচিৎ এই জোড়াফুলের ছবি কিন্তু বাংলার মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। দিদির কাজ আর ভাবনার জোরেই এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে ভোট যুদ্ধ, শুরু হয়ে গেছে বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের মার্চ। কর্মীরা উৎসাহ, উদ্দীপনায় টগবগ করছেন, দিদি সাজিয়ে নিচ্ছেন তার কর্মসূচি ও সফর পরিকল্পনা। এই লড়াই বিজেপির সঙ্গে সারা দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই। প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে দেশকে বেচে দেওয়া দেশদ্রোহীদের লড়াই। আমাদের দিদি এই লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান নেত্রী। ১৯৮৬ সালে কংগ্রেস এবং তার পরবর্তীকালে তৃণমূলের সূচনাপর্ব থেকে আমি তার নির্বাচনী সফর কভার করছি। আমি দেখেছি জনসভা থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন সবটাই তিনি করেন অত্যন্ত আটপৌরে ও সাধারণ ভঙ্গিতে। যেটা বিশ্বাস করেন সেটাই জোর দিয়ে বলেন। এও হতে পারে, সেও হতে পারে এমন ধোঁয়াটে কথাবার্তা তিনি বলেন না। কোন অবস্থাতেই তাকে ভয় পেতে বা ঘাবড়ে যেতে দেখিনি।
আবার একইসঙ্গে সময় সময় বেরিয়ে আসে তার মানবিক মুখ। এই রূপালি সম্পর্কেই প্রেস কনফারেন্সে বলছিলেন, ওর বয়স এখন ২৫ বছর, একটা কোলের বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাবে? এই মানবিক মুখই রূপালির মত নৃশংসতার শিকারদের প্রতিবাদের সাহস দেয়, উদ্দীপ্ত করে সঙ্গী সৈনিকদের। রাজ্যের অনেক মানুষের সঙ্কল্প, ইচ্ছা, স্বপ্ন নিয়ে দিদির নেতৃত্বে দিল্লির দিকে এক লং মার্চ শুরু হল আজ। এই মার্চের সামনে বিজেপির মত কোন দেশবিরোধী ও জনবিরোধী শক্তি দাঁড়াতে পারবে না। আগামি ২৩মে মোদি-অমিতরা বুঝতে পারবেন বাংলা থেকে দিদির নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল তা তাদের গদি কেড়ে নিয়েছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত