কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে ভারত ছাড়ার পর লন্ডনেই আশ্রয় নিয়েছেন পলাতক হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী। গত সপ্তাহেই লন্ডনের রাস্তায় দেখা গেছে নীরবকে। পরনে ছিল ৯ লাখ টাকার জ্যাকেট। তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে ইউকে ডেইলি টেলিগ্রাফের তরফে। জানা গেছে, ভারত থেকে পালিয়ে বেশ বহাল তবিয়তেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছেন। এমনকি, লন্ডনে নতুন কোম্পানি খুলে ফের হীরের ব্যবসাও করছেন চুটিয়ে। কিন্তু এরপরও নীরবকে নিয়ে কেন্দ্র নীরব।
যদিও, কেন্দ্রের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, নীরব মোদীকে দেশে ফেরানোর ও তাঁকে শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এই দাবির একদম উল্টো দাবি করা হয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসনের তরফে। নীরব মোদীকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নাকি তৈরিই ছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। সে কাজ এগনোর জন্য এই সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও চাওয়া হয়েছিল ভারতের কাছে। কিন্তু ভারতের তরফে ব্রিটিশ প্রশাসনের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়নি বলেই দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায়, মোদী সরকার এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি বলেই এখনও বহাল তবিয়তে লন্ডনে ঘুরছেন নীরব।
জানা গেছে, গ্রেট ব্রিটেনের একটি আইনি দল নীরব মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারতকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের তরফে তার নাকি কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। লন্ডনের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবার ভারতকে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স ট্রিটি ( এমএলএটি ) পাঠায় ব্রিটেন। কিন্তু মোদী সরকারের তরফে তার কোনও জবাবই দেওয়া হয়নি। এই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স ট্রিটির অর্থ, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসে সরাসরি গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট বা কোনও নোটিস পাঠাতে পারবে। দূতাবাস সেই ওয়ারেন্ট বা নোটিস পাঠিয়ে দেবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে। তারপরেই ব্যবস্থা নেবে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু আদতে তা হয়নি।
ব্রিটেনের সিরিয়াস ফ্রড অফিস সূত্রে খবর, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে ১৩ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির পরেই লন্ডনে পালিয়ে যান নীরব মোদী। এর পর পরই নাকি ভারতকে জানানো হয়েছিল যে নীরব মোদী লন্ডনে রয়েছেন। শুধু লন্ডনে থাকার কথা জানানোই নয়, ফ্রড অফিসের তরফে ভারতকে জানানো হয়, এই মামলার দায়িত্ব বিখ্যাত আইনজীবী ব্যারি স্ট্যানকোম্বের হাতে দেওয়া হচ্ছে। ব্যারি স্ট্যানকোম্ব টাকা জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় লন্ডনের নামকরা আইনজীবী। জানা গেছে, খোদ ব্যারি স্ট্যানকোম্বই নীরব মোদী সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি চেয়ে চিঠি লেখেন। মার্চ মাসে এই চিঠি লেখা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের তরফে তার কোনও জবাব দেওয়া হয়নি বলেই দাবি করা হয়েছে। এমনকি তথ্যপ্রমাণের জন্য নাকি ভারতে আসতে চেয়েও চিঠি লিখেছিলেন আইনজীবী। কিন্তু তারও কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেই আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার রাস্তা বের করে নেন নীরব মোদী। আর তাই তিনি এখন বহাল তবিয়তে লন্ডনে রয়েছেন। আবার ব্রিটেনের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের করা এই দাবির কোনও উত্তর কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ এর থেকেই স্পষ্ট যে নীরব মোদী গ্রেফতার না হওয়ার পিছনে হাত রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরই। কারণ তাঁর সরকারই নীরবের গ্রেফতারি এড়িয়ে যেতে লন্ডন থেকে আসা চিঠির উত্তরে ‘নীরব’ থেকেছে। এবং যার পরিণাম স্বরূপ জেলের হাওয়া খাওয়ার বদলে এখন লন্ডনে রাজার হালে দিন কাটাচ্ছেন ‘জুনিয়র’ মোদী।