দু’ঘণ্টা দশ মিনিটের যাত্রা শেষ হয়ে গেছিল মাত্র ছ’মিনিটের মাথায়। রবিবার ইথিয়োপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ে ইথিয়োপিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রিবাহী বিমান বোয়িং ৭৩৭। উড়ান সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই দুর্ঘটনায় বিমানের ১৫৭ জন আরোহীর কেউই সম্ভবত বেঁচে নেই। উড়ান সংস্থার সিইও জানিয়েছেন, বিমানে মোট ৩৩টি দেশের যাত্রী ছিলেন। যাঁদের মধ্যে চার জন ভারতের। তাঁদের এক জন শিখা গর্গ ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের উপদেষ্টা। ইউএনইপি-র বৈঠকে যোগ দিতে তিনি নাইরোবি যাচ্ছিলেন। মাত্র ৩ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল শিখার। তাঁর পাঠানো শেষ মেসেজ নিয়েই স্মৃতিচারণে মত্ত তাঁর স্বামী।
অভিশপ্ত রোববারের সকাল ১০টা নাগাদ ফোনের মেসেজ লিস্ট ঘাঁটতে গিয়ে মুখে হাসি ফুটেছিল শিখার স্বামী সৌম্যের। স্ত্রী লিখেছিলেন,‘‘ফ্লাইটে উঠে গেছি। ল্যান্ড করার পরেই তোমাকে জানাচ্ছি”। এর পরের অপেক্ষা মাত্র ১৫ মিনিটের। তার মধ্যেই ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল সবকিছু। স্ত্রীর পাঠানো মেসেজের উত্তর টাইপ করছিলেন সৌম্য। লেখার মাঝেই বেজে উঠেছিল ফোন। ও পারের কণ্ঠস্বর বলেছিল, ‘‘আপনার স্ত্রী যে বিমানে উঠেছিলেন, সেটা ভেঙে পড়েছে। সম্ভবত তিনি বেঁচে নেই।’’
পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছিল সৌম্যের। শিখার সঙ্গে পরিচয় হয় বছর তিনেক আগে, জানিয়েছেন সৌম্য। তিনি তখন ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে (UNDP)কর্মরত ছিলেন। পরে যোগ দেন ইউনাইটেড ন্যাশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামে (UNEP)। চলতি বছরই বিয়ে করেন শিখাকে। তিন মাসও হয়নি বিয়ের। ‘‘নাইরোবিতে শিখার সঙ্গে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু একটা মিটিং চলে আসায় পারিনি। তাই নাইরোবি থেকে শিখা ফিরলে এপ্রিলে একটা ছোটো ট্যুর প্ল্যান করেছিলাম। বিয়ের তিন মাস সেলিব্রেট করতাম। টিকিট কাটাও হয়ে গিয়েছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল,’’ সৌম্যের চোখে শূন্য দৃষ্টি, বুকে চাপা কান্না।
‘‘শিখা খুব ভালো মেয়েই নয়, একজন দায়িত্বশীল স্ত্রীও ছিলেন’’, বললেন সৌম্যের বোন সোনম। তাঁর কথায়, খুব সুন্দরভাবে পরিবারের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। শ্বশুর-শাশুড়ির খেয়াল রাখতেন। তাঁদের নিয়ে মাঝে মাঝেই বাইরে ঘুরতে যেতেন শিখা। দিল্লির পশ্চিম বিহারের বাড়িটিতে লোকে লোকারণ্য। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবেরা সকলেই সমবেদনা জানাতে আসছেন। দিন কয়েকের মধ্যেই শিখার দেহাংশ পৌঁছে যাবে এই বাড়ির চৌকাঠে। সে দিন কী ভাবে নিজেকে সামলাবেন ভাবতেও পারছেন না সৌম্য। তাঁর চোখে এখন শিখার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের ছবি। সাজানো গোছানো ভবিষ্যতের স্বপ্নেরা স্মৃতির পাতা থেকে যেন ফিরে ফিরে আসছে।