ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিলান্যাস ও উদ্বোধনের হিড়িক দেখে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল বিরোধীরা। সকলেরই অভিযোগ ছিল, ভোটের মুখে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতেই একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করছেন মোদী৷ যার মধ্যে অনেক প্রকল্প আগেই চালু হয়ে গেছে বা কোনও প্রকল্পের কাজই শেষ হয়নি। অবশেষে বিরোধীদের অভিযোগই মান্যতা পেল একপ্রকার। দেখা গেল মোদীর শিলান্যাস-কান্ড মিটতেই রবিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন।
এতদিন অহল্যার প্রতীক্ষার মতো উদগ্রীব হয়ে দিন গুনছিলেন দেশের মানুষ। একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল দেশের প্রতিটি প্রান্তে, কবে হতে পারে ভোটের ঘোষণা? মার্চ মাস পড়তেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার জোগাড়। এক দিকে লাগাতার যুদ্ধ-জিগির, অন্য দিকে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে ফি দিন কেন্দ্র ও রাজ্যের উচ্চগ্রামে পারস্পরিক সাফল্যের তরজা জল্পনার পারদ বাড়াচ্ছিল। সুযোগ নিতে তৎপর ছিল সাট্টা বাজারও। নিত্যদিন নতুন চ্যালেঞ্জ— বলুন, আজ কি ঘোষণা হবে, না হবে না!
গত সাত-দশ দিন ধরে একের পর নতুন প্রকল্প, ঘোষিত প্রকল্প, কখনও বা পুরনো প্রকল্পই নতুন করে ক্লান্তিহীন ভাবে শিলান্যাস করে যাচ্ছিলেন মোদী। ছুটে বেড়াচ্ছিলেন এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সরকারের মুখপাত্র জানিয়ে দিচ্ছিলেন, পরের দিনের কর্মসূচির ফিরিস্তি। এই পরিস্থিতিতে শেষমেশ নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণার কথা জানাতেই ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা ছেড়ে টিভির সামনে বসে পড়ে আমজনতা।
নির্বাচন কমিশনের এক সূত্র জানায়, আগে থেকেই ঠিক ছিল যে সোমবার ভোট ঘোষণা হবে। কিন্তু হঠাৎই রবিবার সকালে শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ আসে যে, এদিনের মধ্যেই ভোট ঘোষণা করতে হবে। ফলে যে ভাবে গতকাল নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণা হল, তাতে বিশৃঙ্খলার ছাপ ছিল সর্বত্র। প্রস্তুতিতেও ছিল ঘাটতি। যেমন ইভিএম-ভিভিপ্যাট ব্যবহারের সূত্র স্পষ্ট করতে বলতে পারেননি কমিশন কর্তারা। আবার ভোট ঘোষণার তিন ঘণ্টা পরেও দেশের কোথায় কবে ভোট, তা জানাতে পারেনি কমিশন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়েছিল ৫ মার্চ। এবার প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ৪ মার্চই নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। কিন্তু শিলান্যাসের চোটেই সেটা পিছিয়ে যায় বলে অভিযোগ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলটের। দিল্লীতে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের হস্তক্ষেপেই দেরিতে ভোট ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কমিশন।’ এছাড়াও বিরোধীদের তরফে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাত দফা ভোটের প্রথম দফায় ৯১টি কেন্দ্রে নির্বাচন। মোট আসনের প্রায় কুড়ি শতাংশ আসনে ঠিক এক মাসের মাথায় ভোট হয়ে যাবে। বিরোধীদের দাবি, বিজেপির সুবিধে করে দিতেই ওই ভাবে ভোট ফেলা হয়েছে। ঠিক যে ভাবে বাংলা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে সাত দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
বিরোধীদের যুক্তি, ক্ষমতা ধরে রাখতে এই তিন রাজ্যকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। আসলে মোদী-অমিত শাহরা ভাল মতোই বুঝতে পারছেন যে তিন রাজ্যের ১৬৫টি আসনে ভাল ফল হলেই পুনরায় মসনদে ফিরে আসা সম্ভব হবে। বিরোধীদের ব্যাখ্যা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে গতবারের ফল ধরে রাখা ও বাংলায় আসন সংখ্যা বাড়ানোই এখন লক্ষ্য বিজেপির। সে কারণেই এই তিন রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্র পিছু যাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়, তার জন্য সাত দফার ভোটপর্ব রাখা হয়েছে।