একদিন এক গির্জায় ধর্মযাজক ঢুকে দেখলেন, যিশুর মূর্তির সামনে বল নিয়ে আপনমনে জাগলিং করছেন একজন মানুষ। তার খুব রাগ হল, লোকটাকে ধমকে তিনি বললেন, প্রভুর সামনে তুমি ইয়ার্কি করছো? জানো না এটা প্রার্থনার জায়গা? লোকটা বলল, আমি তো প্রার্থনাই করছি। আমি সবচেয়ে ভালো যে কাজটা পারি, তা হল জাগলিং। তা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি প্রভুকে। আমি একজন সামান্য আলোকচিত্রী। দীর্ঘকাল আজকাল ও আনন্দবাজারে ছবি তোলার কাজ করেছি। সেই কাজের সূত্রেই ১৯৮৬সাল থেকে তৎকালীন তৃণমূল নেত্রী ও পরবর্তী সময়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা মুহূর্তের ছবি তুলছি। একাজ করতে করতেই তার ব্যক্তিত্ব ও সংকল্পের নানা দিক খুলে গেছে আমার চোখের সামনে। একটা সময় উপলব্ধি করেছি, দিদি আমার জীবন ও মানসিকতাকেই বদলে দিয়েছেন। ভালবাসার পাশাপাশি দিদি সময়ে সময়ে আমাকে বকাবকিও করেছেন, আবার স্নেহশীলা দিদির মত ডেকেও নিয়েছেন কাছে। আমি বক্তা নই, সুলেখক নই, ছবিও আঁকতে জানিনা, রাজনৈতিক কর্মীও নই, সামান্য একটু ছবি তুলতে পারি। গির্জার সেই জাগলারটির মত আমি শুধু ছবি দিয়েই তাকে আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাতে পারি।

ভোটের বাজনা বেজে গেছে। দেশকে বেচে দেওয়া মেকি দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে এবার লড়াই তাদের কুশাসনে বিপন্ন আমজনতার। দিদি এই লড়াইয়ের অন্যতম অন্যতম প্রধান নেত্রী। এই ভোটেই আমি দিদির পাশে থেকে কিছু ছবি তুলবো ও ডিজিটাল মিডিয়ায় কিছু কাজ করবো। দিদি আমাকে এই কাজের অনুমতি দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করবো প্রতিবাদী রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে দিদির চেনা চেহারাটার বাইরে বেরিয়ে একজন মহিলা কীভাবে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করেন, তাদের সুখ-দুঃখ-ভালবাসার সাক্ষী হন, দূর গ্রামের সাধারণ মানুষরা তাকে কী চোখে দেখেন, তাদের মনের কোন জায়গাটিতে তিনি রয়েছেন, কীভাবে তার কর্মযোগে বদলে গেছে তাদের জীবন তার একটা অচেনা, অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ধরাই �মানুষের মমতা� নামে আমার এই চিত্রকথা বা সিরিজ যাই বলুন না কেন, তার মূল বিষয়।

এটুকু পড়েই আমাকে অনেকে মমতার দালাল হিসেবে দেগে দিতে পারেন। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। ছবিগুলো দেখেই বুঝতে পারবেন এগুলো সাজানো ছবি নয়। কোন পোজ দিয়ে এ ছবি তোলা যায় না। এসব মুহূর্ত বলে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা। এ ছবি বাংলার বদলে যাওয়া মানুষের ছবি, তাদের জীবনের ছবি। এ ছবি দিদির স্বপ্ন সাকার হওয়ার কাহিনি। অনেকে এতে রাজনীতির গন্ধ পেতে পারেন। আমি কখনোই রাজনীতি করি না মার্কা মিথ্যাচার করি না। কারণ, রাজনীতি না করাটাও একটা রাজনীতি। আমার এই ছবিগুলো ধরবে একটা আকাড়া জীবন, তাকে রাজনীতি বললে রাজনীতি হোক। মানুষের যে ভাল করে, তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাকে সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকা, তাকে ভোট দেওয়া যদি রাজনীতি হয়, সেই রাজনীতি আমি করি। আমি দেখেছি শহরের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আমাদের দিদিকে পছন্দ করেন না। তিনি যা করেন সেটাই তাদের সমালোচনার খোরাক। অথচ গ্রামবাংলার ও শহরের নিম্নবিত্ত মানুষদের মধ্যে তিনি দারুণ জনপ্রিয়। মানুষের এই পছন্দকে সমর্থন করা যদি রাজনীতি হয়, সেই রাজনীতি আমি করি।
দিদির সঙ্গে থাকতে থাকতে, ছবিতে ধরা মুহূর্তগুলির সাক্ষী হতে হতে আমার মনে হয়েছে, এই মহিলা বাংলাকে সত্যিই ভালবাসেন, ভালবাসেন দেশকে। তাকে জেতানো, তার দলকে ভোট দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তিনি যে কাজ করছেন তা আমার এই সিরিজের ছবিগুলিই বলবে। বলবে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথীর মত প্রকল্পগুলি গ্রামবাংলার মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে তার কথা। মানুষের প্রতি তার মমতা যেন ঝরে পড়েছে এই প্রকল্পগুলির মধ্যে দিয়ে। �মানুষের মমতা� সিরিজের এই ছবিগুলি দেখলেই পরিষ্কার হবে কেন আপনারা মোদি-অমিতদের পরাস্ত করতে তৃণমূলকে ভোট দেবেন। সবসময় সবাই যে আমার সঙ্গে একমত হবেন তা নাও হতে পারে। এটাই স্বাস্থ্যের লক্ষন। কাজেই দ্বিমত থাকলে সেটা পরিষ্কার করে জানান, কোন ভুল হলে আমি শুধরে নেবো। আমি সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেস দলটির সঙ্গে যুক্ত নই কিন্তু তাদের কর্মসূচি ও মানবিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজকর্মকে আমি সমর্থন করি। এই দলের অনেক মন্ত্রী আমার ভাইয়ের মত। দীর্ঘদিন ধরে তাদেরও বড় হওয়া দেখেছি আমি। তারাও আমাকে ভালবাসে, জানে অশোকদা নিজের মত করেই দিদির পাশে থাকেন।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অতিবাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। চিন থেকে আসা বই পড়তে পড়তে আর পার্টি ক্লাস করতে করতে আমার মনে পড়তো রেলের অস্থায়ী খালাসির চাকরি করা আমার বাবার কথা। আমার জন্মের পাঁচ বছর পর বাবার চাকরি পাকা হয়। মনে পড়তো ধান সেদ্ধ করে চাল করতে ব্যস্ত আমার মায়ের মুখ। ভাবতাম, বিপ্লব হলে মা-বাবার এই কষ্ট আর থাকবে না। আমাদের দিদির মধ্যেও মানুষের কষ্টকে রোখার বা তা দূর করার একটা জেদ, তাগিদ দেখতে পাই আমি। এজন্যই আমি তার সঙ্গে আছি। আমি তাকে নিজের বাড়িতে টালির নালার জল ঢুকে যাওয়া ঘরে অবিচলিত মুখে চৌকিতে বসে থাকতে দেখেছি। দেখেছি সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার লড়াই করার সাহস। �মানুষের মমতা� এই চিত্রকথা বা সিরিজে আপনারা আমার এই দিদিকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন, মিলিয়ে নেবেন তার কথা ও কাজকে। ‘মানুষের মমতা’ সিরিজ ধরবে মানুষের জন্য কাজ করে চলা আমাদের দিদির এক অজানা আখ্যান। নিজের কাজ দিয়েই তিনি তার নামটাকে সার্থক করে তুলেছেন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত