রবিবারই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ গতকালই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ল। আর ওদিন থেকেই পুরনো কিন্তু অপরাজেয় হাতিয়ার নিয়ে লোকসভা ভোটে লড়তে নামার কথা ঘোষণা করে দিল পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল। আর সেই হাতিয়ার হল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্র্যান্ড ‘উন্নয়ন’। পূর্বস্থলী ১ নং ব্লকের শ্রীরামপুরে দলীয় কর্মিসভায় সেই উন্নয়ন অস্ত্রেই শান দিলেন দলের জেলা সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। স্বপনবাবুর কথায়, ‘আমাদের নেত্রী মমতা ব্যানার্জির ধর্মই হল উন্নয়ন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে তিনি আমাদের শেখাননি। আমাদের জেলায় তাই উন্নয়নকে সামনে রেখেই লোকসভায় ঝাঁপাব।’
লোকসভা ভোটে লড়ার জন্য জেলা তৃণমূলের একটা রোডম্যাপ ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সেই রোডম্যাপেও মমতারই ছায়া। মমতা বলেছেন, লোকসভায় বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ চাই। আর স্বপনবাবু বলছেন, সব বুথেই জয় চাই। জয় হবে কীভাবে? তার রাস্তাও বাতলে দিচ্ছেন স্বপনবাবু। তা হল, গত ৫ বছরে উন্নয়নের যে জোয়ারে জেলার শহর-গ্রাম ভেসেছে, তার বিস্তারিত তালিকা টাঙাতে হবে সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির কার্যালয় ও গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। পঞ্চায়েত এলাকায় শুধু পঞ্চায়েত অফিসেই নয়, এক-একটা পঞ্চায়েতের অধীনে যে সমস্ত গ্রাম রয়েছে, প্রতিটি গ্রামে কী উন্নয়ন হয়েছে, তার বিস্তারিত খতিয়ান টাঙাতে হবে সেই গ্রামের কোনও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
দলীয় সূত্রে খবর, গ্রামগুলিকে বুথভিত্তিক বিভাজন করে সংশ্লিষ্ট বুথে কী উন্নয়ন হয়েছে, তার বিস্তারিত তালিকা এক সপ্তাহের মধ্যে তৈরি করে টাঙাতে হবে। সেই তালিকায় কী কী থাকবে, তারও স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। যেমন, খাদ্যসাথী, যুবশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, উৎকর্ষ বাংলা, কন্যাশ্রী, সমব্যথী, তাঁতসাথী, স্বাস্থ্যসাথী-সহ ‘মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত’ বিভিন্ন মানবিক প্রকল্পে কতজন উপকৃত হয়েছেন, কতজন ছাত্রছাত্রী সরকারি বৃত্তি পেয়েছে, কতজন সহায়ক দরে ধান কেনার চেক পেয়েছেন, কতজন কৃষক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কতজন ফসলবিমা পেয়েছেন, কোন কোন ক্লাব অর্থসাহায্য পেয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তালিকা তৈরি করে সর্বসমক্ষে টাঙিয়ে দিতে হবে।
তবে ব্যক্তিগত সুবিধা প্রাপ্তির সঙ্গে সমষ্টিগত উন্নয়নের তালিকাও থাকবে। সেখানে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার, স্কুলবাড়ি তৈরি ও মেরামতি, পুকুর খনন, গ্রন্থাগার তৈরি, শৌচাগার তৈরি, বিদ্যুদয়ন, কৃষিতে সাহায্য প্রভৃতির তালিকাও থাকবে। স্বচ্ছতার জন্য সমস্ত প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দ ও খরচের হিসেবও উল্লেখ করা থাকবে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে প্রকল্প চালু করেছেন, তাতে উন্নয়নের ছোঁয়া সবাই পেয়েছেন। তাই সেটাকেই আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচারে তুলে ধরবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। জানা গেছে, যাঁরা প্রচার করবেন, তাঁদের গোটা বিষয়টি বোঝানোর জন্য জেলার ২৩টি ব্লকেই কর্মী সম্মেলন করা হবে। ঠিক হয়েছে, ১০ মার্চের মধ্যে সব ব্লকেই সম্মেলন সেরে নিতে হবে। যাতে কর্মীরা দ্রুত প্রচারে নেমে পড়তে পারেন।
উল্লেখ্য, জেলার সবকটি পুরসভা, জেলা পরিষদ, সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতি ও সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতেই ক্ষমতায় তৃণমূল। এমনকি ৯৫ শতাংশেরও বেশি পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের। পুরসভাগুলির ক্ষেত্রেও ৯৮ শতাংশ কাউন্সিলরই তৃণমূলের। ফলে দলের বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, বিধায়ক, পুরপ্রধান, পুরসদস্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের বলা হয়েছে, উন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তালিকা তৈরি করে বুথকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দরজায় দরজায় পৌঁছে যেতে। যার অর্থ, মমতার উন্নয়ন অস্ত্রেই বিরোধীদের নিকেশ করতে আটঘাট বেঁধে ময়দানে নামছে ঘাসফুল শিবির।