দেশে ভোটের বাদ্যি বেজে গেছে। একেবারেই দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। রবিবারই নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই হাতে আর বেশি সময় নেই বুঝেই শেষ সময় বাজি মারতে সংবাদ মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে মোদী সরকার। খবর, যদি এই নির্বাচনে বিজেপি হেরে যায়, তবে নতুন সরকার এলে তার ঘাড়েই চাপবে বিজ্ঞাপনের এই বিপুল খরচের বোঝা।
এপ্রিল থেকে শুরু লোকসভা ভোট। এক-দু’ সপ্তাহ পরেই নির্বাচনী বিধি কার্যকর হবে। তখন আর প্রচার সম্ভব নয়। তাই এই ক’দিন খবরের কাগজ, চ্যানেল, রেডিও স্টেশনে একের পর এক বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে মোদী সরকার। জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত প্রচারকাজে সবথেকে বেশি খরচ করেছে বিজেপি। তার পরে রয়েছে কেজরিওয়ালের আপ। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে সংবাদ পত্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ১০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। টিভি চ্যানেলে, রেডিও-র ক্ষেত্রে সেই অঙ্ক ২০০ কোটি টাকা। এই খরচ আসবে পরবর্তী আর্থিক বছরের তহবিল থেকে।
টিভি, খবরের কাগজ, রেডিওতে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার ৪৫ দিন পর উক্ত মাধ্যম সেই খরচের চালান বিজ্ঞাপনদাতাকে পাঠায়। এই অর্থবর্ষ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ। সুতরাং ফেব্রুয়ারি, মার্চে দেওয়া বিজ্ঞাপনের খরচের চালান সরকারের হাতে আসতে আসতে এপ্রিল, নতুন অর্থবর্ষ। অর্থাৎ এর থেকেই স্পষ্ট যে সরকার পাল্টালে সেই টাকা মেটাতে হবে নতুন সরকারকেই।
প্রসঙ্গত, দেশের দু’টি প্রধান সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–এ গত সপ্তাহে মোদী সরকার ৩০ থেকে ৩৫টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আর দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকার ২০টি। বৃহস্পতিবার ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-সহ এই দুই সংবাদপত্রে এমন ১০ থেকে ১২টি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, যাতে মোদী ও কেজরিওয়ালের ছবি রয়েছে। এরপর শুক্রবার এই তিন সংবাদপত্রে ১৪ থেকে ১৭টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার। আবার শুক্রবার ‘ডেকান হেরাল্ড’-এর বেঙ্গালুরু সংস্করণের ৪ থেকে ১৩ পাতা জুড়ে টানা মোদী সরকারের ফুলপেজ বিজ্ঞাপন রয়েছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি।
তবে সরকারের বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত নয় আঞ্চলিক বা হিন্দি কাগজগুলোও। শুক্রবার হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক জাগরণে ১৩টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে মোদী সরকার। আর হিন্দুস্তানে ছ’টি। মার্চের প্রথম ছ’দিনে ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’, ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ মোদী সরকার মোট ৭৪টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। যা দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু নিজেদের প্রচার নয়, সংবাদমাধ্যমগুলোকে হাতে রাখার জন্যই সরকার এত খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে। আসলে যারা এত বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের নামে চট করে কোনও সংবাদ মাধ্যম নিন্দা করতে পারে না। অর্থাৎ শুধু ভোটপ্রচারের উদ্দেশ্যেই পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে না। এর পিছনে রয়েছে মোদী সরকারের রাজনৈতিক কৌশলও।