আগামী কাল অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূল ছাড়া বাংলার আর কোনও রাজনৈতিক দলই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তবে জানা যাচ্ছে, বিজেপি দফায় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। আর বাম এবং কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে সমঝোতা সূত্রের অপেক্ষায়।
বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়েই সবচেয়ে বেশী ধোঁয়াশা। কারণ তালিকা ঘোষণা করবে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তালিকার চেহারাটা কেমন হতে চলেছে, সে সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের স্পষ্ট কোনও ধারণাই নেই। কারণ দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে এই ব্যাপারে কোনও আলোচনাতেই রাজি নয় সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। এমনকি বঙ্গ বিজেপিকে প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করতেও বারণ করা হয়েছে। অমিত শাহরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে বিচার-বিশ্লেষণ করে দিল্লী সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবে। বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাংলার প্রার্থী তালিকা এক বারে ঘোষিত হবে না। মঙ্গলবার বা বুধবার ঘোষিত হতে পারে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থীর না। ওই দুই আসনে ভোট হবে প্রথম দফায়। তার পরে ধাপে ধাপে প্রত্যেকটি দফার জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা কবে ঘোষিত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কৌশলগত কারণে রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম বামেরা একটু আগেভাগেই ঘোষণা করে দিয়েছে। ওই দুই আসনে পাল্টা প্রার্থী দিলে জোট ভাঙার দায় কংগ্রেসের উপরেই যে পড়বে, সে কথা মাথায় রেখেই এই কৌশল নিয়েছিল বামেরা। সেটা সফলও হয়েছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জ আসন বামেদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন বলে খবর। তার বিনিময়ে বাংলায় অন্তত ১৭টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে কংগ্রেসের তরফ থেকে।
সিপিএম অবশ্য ১৭টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এখনও। দু’তিনটি আসন নিয়ে দর কষাকষি বহাল। সিপিএমের বক্তব্য – বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি এমনিতেই কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার উপরে জোর দিয়ে শরিকদের রাজি করানো গিয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু সিপিআই এবং আরএসপি নিজেদের ভাগের একটি করে করে আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে রাজিও হয়েছে বলে খবর। যে সব আসনে সিপিএম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, সে রকম বেশ কয়েকটি আসনও কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ১৭ হওয়া কঠিন। ফরওয়ার্ড ব্লককে সমঝোতায় রাজি করানোও সিপিএমের পক্ষে কঠিন হচ্ছে। ফলে ফরওয়ার্ড ব্লকের ভাগে থাকা পুরুলিয়া আসনটি বামফ্রন্টের তরফ থেকে কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া নিয়েও কিছুটা জট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বহরমপুর, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ মালদহ, উত্তর মালদহ, রায়গঞ্জ এবং পুরুলিয়ার আসন কংগ্রেস চাইছে। কিন্তু বামেদের অনড় অবস্থান দেখে শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জের উপর থেকে নিজেদের দাবি কংগ্রেস প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এর পরে যদি পুরুলিয়াও কংগ্রেসকে ছাড়তে না পারে বামেরা, তা হলে পূর্ণাঙ্গ সমঝোতায় পৌঁছনো মুশকিল হতে পারে
সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হলেই বামেরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে। ১৩ মার্চের মধ্যেই সে কাজটা সেরে ফেলতে চাইছে বামফ্রন্ট। কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে দিল্লী থেকে।
