বাংলার ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর থেকেই মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়নে ব্রতী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গ্রাম অঞ্চলের দিকে মেয়েদের যাতে কম বয়সে বিয়ে না দেওয়া হয়, টাকার অভাবে যাতে কারোর পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায় তাই মমতা এনেছিলেন তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প কন্যাশ্রী, যা সমাদৃত হয়েছে বিশ্বের দরবারে৷ কিন্তু মমতা তো শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি তো বাংলার মেয়েদের মা, তাই মেয়েদের বিয়ের ভারও হাসিমুখে নিয়ে এনেছেন আরো এক প্রকল্প রুপশ্রী৷ যার জেরে মিলে গেল মৌসুমী এবং সত্যজিতের চার হাত৷
মেয়ের বিয়ের জন্য রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদন ব্লক প্রশাসনে জানিয়ে ছিলেন মৌসুমীর বাবা দীনবন্ধু দাস। রূপশ্রী প্রকল্পের সেই টাকা উপহার স্বরূপ হাতে নিয়ে সন্ধেয় বিয়ের আসরে হাজির হয়েছিলেন রামনগর ১ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক আশিস রায় এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরাও। প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা নববধূ মৌসুমীর হাতে তুলে দেন বিডিও এবং সভাপতি।
রূপশ্রী প্রকল্প নিয়ে কনের বাব বললেন, ‘’মেয়ের বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা মিলবে জেনেই আবেদন জানিয়েছিলাম। প্রশাসনও মঞ্জুর করেছেন আমার সেই আবেদন। এই প্রকল্প সত্যিই দুঃস্থ কন্যার বাবার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়”৷ মৌসুমী এবং তাঁর বর সত্যজিৎ দুজনেই মূক এবং বধির, যদিও তাতে বিয়ে আটকায়নি৷ সব সম্পন্ন হয়েছে সুষ্ঠুভাবে৷
মৌসুমীও সত্যজিৎ দুজনেই মূক এবং বধির। সম্বন্ধের বিয়ে তাঁদের। তবে উভয়ই বেশ পরিচিত ছিলেন কাঁথির মূক ও বধিরদের স্কুলে পড়ার সময়। এক ক্লাসের ব্যবধান ছিল তাঁদের। স্কুলের এক শিক্ষকের মধ্যস্থতায় বিয়েতে রাজি হয়ে যান উভয়ের বাড়ির লোকেরা। অবাক হলেও এমন নীরব বিয়ের সাক্ষী হতে পেরে খুশি খাদালগোবরার মানুষ। খুশি বিডিও, সভাপতিরাও। বিডিও আশিস রায় বলেন ‘’এমন বিয়ে সত্যিই এর আগে দেখিনি, তবে ওদের সম্পর্কের রসায়নে অভিভূত”৷
রূপশ্রীর টাকা পেয়ে খুশি সত্যজিৎও মৌসুমী। যা তাঁরা বাড়ির লোকদের বোঝালেন ইশারায়। মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলেও শুভদৃষ্টির শুভক্ষণে মিলনের মধুর সুরে ভাসতে দেখা গেল সত্যজিৎ আর মৌসুমীকে।