সরকার নয়, যেন সার্কাস চলছে! যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিমুহুর্তেই ডিগবাজি খাচ্ছেন সবাই! এবার রাফাল চুক্তির নথি নিয়ে নিজের বক্তব্য থেকে সটান একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। মাত্র দু’দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘চুরি’ গেছে রাফাল নথি। আর তার ৪৮ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই বললেন, চুরি নয়, ‘ফোটোকপি’!
রাফাল রায় পুনর্বিবেচনা মামলার শুনানিতে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেছিলেন, চুরি হয়ে গেছে রাফাল চুক্তির ফাইল। সেই চুরির তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতো সুরক্ষিত জায়গা থেকে কী ভাবে ফাইল চুরি হল, খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেন তা নিয়ে কিছু জানলেন না— সেই প্রশ্ন তুলে সরকারকে চেপে ধরেছিল তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ দেশের সকল বিরোধীরাই।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই চুরির তত্ত্ব খাড়া করছে কেন্দ্র। আর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এখন বলছে রাফালের ফাইল চুরি হয়েছে। কিন্তু আপনি তো দেশটাকেই চুরি করে নিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য চুরি হয়েছে। যাঁরা রাফালের ফাইল সামলে রাখতে পারে না, তারা নাকি দেশকে সুরক্ষিত রাখবে, দেশকে সামলাবে!’ মমতা এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন যে, ‘দেশের আর কোনও আভ্যন্তরীণ ফাইল চুরি যায়নি তো?’
জানা গেছে, সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বেণুগোপাল বলেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে রাফালের নথি আদৌ চুরি হয়নি। তিনি আসলে সুপ্রিম কোর্টে বলতে চেয়েছিলেন যে, মামলাকারীরা তাঁদের আবেদনের সঙ্গে মূল নথির ফোটোকপি ব্যবহার করেছিলেন। সেগুলিই সরকারের ‘গোপন’ নথি। তাঁর দাবি, ‘বিরোধীরা বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে ফাইল চুরি হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছিল। এটা পুরোপুরি ভুল। ফাইল চুরি হয়েছে— এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল।’
প্রসঙ্গত, রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের আর্জি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করার পরে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা এবং প্রশান্ত ভূষণ। বেণুগোপালের দাবি, ওই আর্জি পেশ করার সময়ে মূল রাফাল চুক্তির তিনটি নথির ফোটোকপি তাঁরা জমা দিয়েছিলেন। তবে একান্তে সরকারি কর্তারাও মানছেন, ‘চুরি’ শব্দটা ব্যবহার না করলেও পারতেন বেণুগোপাল। আবার অ্যাটর্নি জেনারেলের নয়া দাবির পরই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘মুখ খুলেছেন’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মালা সীতারামন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল ‘ফোটোকপি’ নিয়ে যা যা বলেছেন, তা হুবহু ‘কপি-পেস্ট’ করে টুইটারে তুলে দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, বেণুগোপালের নয়া দাবির পরে কংগ্রেসের কটাক্ষ— যে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ফাইল চুরি এবং ফোটোকপির তফাত জানেন না, তারাই কি না ‘দেশ সুরক্ষিত রয়েছে’ বলে দাবি করে! মোদীকে ‘বকবক করা চৌকিদার’ বলে খোঁচা দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা টুইটারে লেখেন, ‘মোদীজি, কাল কোন মিথ্যেটা বলবেন?’
গত বুধবার কেন্দ্র অভিযোগ তোলে, চুরি যাওয়া গোপন ফাইল প্রকাশ করে সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করেছে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র। সেই প্রসঙ্গ তুলে উড়িষ্যার জয়পুরের সভায় রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, মোদী যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নেগোশিয়েটিং টিমকে উপেক্ষা করে নতুন রাফাল চুক্তি তৈরি করেছিলেন, ইংরেজি সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনেই তা স্পষ্ট। ‘নিখোঁজ’ রাফাল নথির তদন্ত মনোহর পর্রীকরকে দিয়ে শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উড়িষ্যার সুনাবেড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’-এর কারখানায় মিগ এবং সুখোই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে রাহুল বলেন, ‘দেশের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে উড়িষ্যার। কিন্তু মোদী বায়ুসেনার টাকা চুরি করে অনিল অম্বানীকে দিয়েছেন। হ্যালের থেকে বরাত কেড়ে হাজার হাজার যুবককে চাকরি থেকে বঞ্চিতও করেছেন।’