গোটা দেশের কাছেই তিনি ‘দিদি’ বলে পরিচিত। তাঁর এক ডাকেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলায় ছুটে আসেন দেশের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা। তাঁর দেখানো পথকেই ‘রোল মডেল’ করে এগিয়ে চলেন দেশের বিরোধীরা। আর এবার জানা গেল বাংলার বাঘিনী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের ‘আইকন’ মানেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং-ও। দেশের প্রথম অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরার মতে, দেশের যে কোনও জটিল ইস্যুতে মমতা যেভাবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তা অন্যদের কাছে অনুকরণীয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কনস্টিটিউশন ক্লাবে প্রকাশ পায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই ‘ইন্ডিয়া ইন ডিস্ট্রেস’। সেই বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের বক্তা ছিলেন তিন নারী। ইন্দিরা জয়সিং, লেখিকা নীলাঞ্জনা রায় ও টিভি সঞ্চালক নিধি রাজদান। এবং অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। অনুষ্ঠানে নীলাঞ্জনা বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে পদার্পণ করেননি মমতা। বরং লড়াই করে নতুন রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন তিনি। ভারতে এমন রাজনৈতিক নেতার সংখ্যা খুবই কম।’
মমতার বইয়ের নির্বাচিত অংশ পাঠ করে নিধি বলেন, ‘দেশে যখন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের প্রবল প্রয়াস চলছে, তখন সবার আগে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ মমতার বই উদ্ধৃত করে ইন্দিরা বলেন, ‘গোটা দেশের কাছে মস্ত সুযোগ আসতে চলেছে। পরিবর্তনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা চলবে না। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পথে নামতে হবে অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও।’
‘ইন্ডিয়া ইন ডিস্ট্রেস’ বইটির মাধ্যমে মমতা তুলে ধরেছেন বিজেপি ও মোদী সরকার কৃত নোংরা রাজনীতিকে। বইতে উঠে এসেছে ধর্মের নামে হত্যালীলা, ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যকে ভুলুণ্ঠিত করা, কেন্দ্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার, কৃষকের দুর্দশা, আম নাগরিকের জীবনে নজরদারি চালানো, নোটবন্দীর নামে মানুষকে চরম সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া, এনআরসি-র নামে কয়েক লক্ষ মানুষকে নিজদেশে পরবাসী করে তোলার কথা। উঠে এসেছে পুলওয়ামার পর তাঁর টুইট এবং ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংয়ের টুইটের কথাও।
বইয়ের উপসংহারে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘যাঁদের হাতে সুশাসনের দায়িত্ব, তাঁদের হাতে রক্তের দাগ। দাঙ্গা, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের রক্ত।’ তিনি আরও লিখেছেন যে, ‘দেশ, আদর্শ, সংস্কৃতি, প্রথা, গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, প্রতিষ্ঠান ও সংবিধান রক্ষায় আসুন আমরা হাতে হাত মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হই। দেশের জনগণ এখন সব উপলব্ধি করতে পারছে। তারা পরিবর্তন আনতে চাইছে। সময় এসে গেছে!’ মোদ্দাকথা বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ানোর কথাই বলছে মমতার বই।