জলপাইগুড়ির এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে স্বপ্না বর্মণের সাফল্যের পিছনে রয়েছে দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। স্বপ্নার বাবা পঞ্চানন বর্মন পেশায় ভ্যান চালক। অসুস্থতার জন্য গত সাতবছর ধরে তিনি শয্যাশায়ী। মা বাসনা বাড়ি বাড়ি কাজ করে ও চা বাগানে পাতা তুলে সামান্য টাকা রোজগার করেন। স্বপ্না নিজেও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন। তাঁর পায়ের দু’ পাতায় ছ’টি করে আঙুল। এই সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনের মতো কঠিন ইভেন্টে ভারতকে সোনার পদক এনে দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির মেয়ে স্বপ্না বর্মন। আর হেপ্টাথলনে এই প্রথম সোনা পেল ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স। তাঁর জন্যই জার্মানির একটি খেলার সরঞ্জাম তৈরির সংস্থা বিশেষ জুতো তৈরি করছে। যা পরে দু’পায়েরই ছয় নম্বর আঙুলটা আর কড়ে আঙুলের উপর উঠে তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলবে না। সেই বিশেষ জুতো পায়ে দিয়ে কেঁদেই ফেললেন স্বপ্না।
এশিয়াডে হেপ্টাথেলনে স্বর্ণপদক জয়ী স্বপ্নার পায়ের দুটো পাতাতেই ৬টি করে আঙুল। সাধারণ জুতো পরতে অসুবিধে হত স্বপ্নার। সোনার মেয়ের এই সমস্যার কথা জানতে পেরে এগিয়ে এসেছিল জার্মান কোম্পানি অ্যাডিডাস। তারাই বানিয়ে দিয়েছে এই বিশেষ জুতো। এই জুতো পায়ে দিয়ে কোন অসুবিধা হবে না তাঁর, ব্যাথাও হবে না।
জুতো পেয়ে উচ্ছ্বসিত স্বপ্না বলেছেন, অত্যন্ত খুশি হয়েছি। প্র্যাকটিসও শুরু করে দিয়েছি। এবার ব্যথা ছাড়াই মাঠে নামতে পারব। এই সমস্যার সমাধানে অ্যাডিডাসের ভারতের টিম এবং অ্যাথলিট সার্ভিসেস ল্যাব যেভাবে সাহায্য করেছে, তাতে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দু’পায়ের বারো আঙুলের জন্য তৈরি ইভেন্ট প্রতি ২ জোড়া করে এই বিশেষ জুতো পরেই দোহায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ফের সোনার স্বপ্ন দেখছেন স্বপ্না বর্মন।
সল্টলেক সাইতে অনুশীলনের মাঝে জাকার্তা এশিয়াডে সোনাজয়ী মেয়ে জানালেন, “‘‘দৌড়ের পরে আগের মতো আর ব্যথা হচ্ছে না ছয় নম্বর আঙুলে। এই জুতো পরেই অনুশীলন করছি। গতি আর স্ট্যামিনা আরও বাড়াতে পারলে জার্কাতার চেয়ে ভাল পয়েন্ট করব। কোচ স্যর তো সে রকমই বলছেন”। শরীরে অন্তত চারটি বড় চোট নিয়ে জার্কাতায় করেছিলেন ৬০২৬ পয়েন্ট। এ বার তাঁকে ৬১০০-র লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন কোচ সুভাষ সরকার। কোচের রুটিন মেনেই দু’বেলা অন্তত সাত ঘণ্টা ঘাম ঝরাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলার সাম্প্রতিক কালের অন্যতম সফল মুখ।