মেট্রোয় ওঠা এখন কার্যত বিভীষিকা। কখনও আগুনের ফুলকি দেখা দিচ্ছে, কখনও বড়সড় অগ্নিকান্ড হচ্ছে, কখনও সুড়ঙ্গেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আর লেট করা তো মেট্রোর স্থায়ী অসুখ। যাত্রী ভোগান্তি অব্যাহত। এর মধ্যেই এল চীন থেকে নতুন রেক। তবে নতুন রেকে কি আর যাত্রী অসন্তোষ মেটে? নোয়াপাড়া কারশেডে নতুন রেক আসার পরে কর্তৃপক্ষ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন যাত্রীরা।
নতুন রেকের ছবি আপলোড হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান রাকেশ সরকার। ঝকঝকে নতুন রেক মাসখানেক পরই বিজ্ঞাপনী প্রচারের দৌলতে কেমন চেহারা নিতে পারে, তার সম্ভাব্য ছবি পোস্ট করেন তিনি। এর পরই শুরু হয় ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পালা। কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘মহড়া চলতেই থাকবে, সৃষ্টির শেষদিন পর্যন্ত।’ এর পরই সৈকত সমাদ্দারের তির্যক মন্তব্য, ‘এটা কোন মিউজিয়মে রাখা হবে একটু জানাবেন? তা হলে একটা সেলফি তুলে আসব মহামূল্যবান এই রেকের সাথে।’ বিরক্ত কৌশিক মণ্ডল লিখেছেন, ‘মাঝেমাঝে কারশেড থেকে বের করে লোককে দেখিয়ে আবার তুলে রাখবেন। কারণ ট্রেন তো চলবে না, ট্রায়াল-ই হয়ে যাবে।’ শ্রীজিতা বসু তো সরাসরি জানতেই চেয়েছেন, ‘জীবদ্দশায় এই মেট্রো কি চড়তে পারব?’ রকি অ্যান্থনি গোমসের ‘আশা’, ‘২০৩০ সালের মধ্যে এই রেক নিশ্চই কাজ শুরু করতে পারবে!’
বৃহস্পতিবার নোয়াপাড়ায় যখন নতুন রেকের চেহারা দেখানো হল সংবাদমাধ্যমকে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেও ব্যস্ত সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল নোয়াপাড়া থেকে শোভাবাজার পর্যন্ত পরিষেবা। শুক্রবার দুপুরেও ট্র্যাক পরীক্ষার জন্য ফের কিছুক্ষণ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। নতুন বছরে অন্তত আটবার নানা যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিপর্যস্ত হয়েছে কলকাতা মেট্রোর পরিষেবা। ‘অপরাধী’ জেনেও বাতিল করা যাচ্ছে না ৩৫ বছরের পুরোনো ১৩টি রেক। কোন ভরসাতেই বা এই রেক বাতিল করবে মেট্রো? চেন্নাই আইসিএফ-এ তৈরি যে রেক দু’বছর আগে কলকাতায় এসেছে, এখনও সেই রেকই যাত্রীপরিবহণের কাজে ব্যবহার করতে পারেনি সংস্থা। তাই যাত্রীদের বিরক্তি এবং ক্ষোভ আদৌ অমূলক নয়।
যতই নতুন রেক নিয়ে মাতামাতি করুক মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ, তা দিয়ে যাত্রীদের মন টানতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তাঁরা। একে তো রোজকার ভোগান্তি তারপর এই নতুন রেক কবে থেকে যাত্রা শুরু করবে তা কেউ জানে না। তাই রাগ, ক্ষোভ স্বাভাবিক কারণ চিনা রেকে মেট্রোতে যাতায়াত করার পরিকল্পনা এখন বিশ বাঁও জলে।