দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। কিন্তু তাঁর ৫ বছরের শাসনকালের মেয়াদ শেষের পর প্রায় গোটা দেশই তাঁর ওপর চটে। ফলে ভোটের আগে বেশ বি-পাঁকেই পদ্মশিবির। আর তাই এখন একেবারেই দম ফেলার ফুরসত নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দেশের প্রতিটি প্রান্তে যে ড্যামেজ কন্ট্রোলে যাবেন, সে সময়ই নেই। এমনকি ভিডিও মারফতই মেট্রো ট্রেন চালাতে হচ্ছে তাঁকে, পর্দার এ পার থেকেই শিলান্যাস করে বলতে হচ্ছে, ‘ভারত মাতা কী জয়!’
নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার জন্য প্রস্তুত। আর নির্বাচনী আচরণবিধি চালুর আগে শেষ মুহূর্তের শিলান্যাস, উদ্বোধনের কাজে তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেতে হয়েছে মোদীকে। গত কয়েক দিন ধরেই এই হিড়িক দেখা গেছে। গতকাল সকালেও যেমন মন্ত্রিসভার বৈঠক করলেন তিনি। অনেকের মতে ভোটের আগে এটাই শেষ বৈঠক। যদিও অরুণ জেটলি বলছেন, ‘শেষ বলে কিছু নেই।’ কিন্তু এই বৈঠকেও এ দিক ও দিক থেকে কুড়িয়ে কুড়িটির মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন মোদী।
তার পরেই নিজের বাসভবনে দৃষ্টিহীনদের জন্য কয়েন প্রকাশ করলেন। সেখান থেকেই ভিডিওয় কথা বললেন জনঔষধি প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের সঙ্গে। তা শেষ হতেই সিকিম, অরুণাচল, ত্রিপুরাতেও ‘ইন্ট্রিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’-এর শিলান্যাস করেন। সেটিও ভিডিওর মাধ্যমে। তারপর দিল্লী থেকেই চালু করেন নাগপুরের মেট্রো। যা থেকে এটাই স্পষ্ট যে লোকসভার মুখে ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকাতেই টনক নড়েছে তাঁর। তাই ‘জুমলা’র পথ ছেড়ে কিছু খুচরো ‘বিকাশ’ করে দেশবাসীর মন জিততে চাইছেন তিনি।
আজ আবার দিল্লীর বাইরে বেরোচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক ভোটের আগে এক লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের ঝুলি নিয়ে উত্তরপ্রদেশে তিনি। যাচ্ছেন নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে। তারপর কানপুর হয়ে গাজিয়াবাদ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছেই ভোটের মুখে ওই এক লক্ষ কোটির প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী? অন্যদিকে, আজ কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডরের শিলান্যাস, কানপুর থেকেই লখনউ মেট্রো রেল চালু করবেন, আগরায় মেট্রোর শিলান্যাসও করবেন মোদী। ফলে এ দাবিও উঠছে যে, সামনে ভোট বলেই এমন শিলান্যাসের ঝড় তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আবার যেভাবে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক শিলান্যাস এখনও করে যাচ্ছেন, তা দেখে বিরক্ত বিরোধীরা। কারণ ৯ মার্চ সকাল পর্যন্ত এখনও প্রধানমন্ত্রীর শিলান্যাসের কর্মসূচি প্রকাশ্যে এসেছে। যার ফলে তার আগে ভোটের দিন ঘোষণার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অথচ ২০১৪ সালে ৫ মার্চ ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেসের আহমেদ প্যাটেল প্রকাশ্যেই এ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শিলান্যাস সফর শেষ না হলে কী নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করবে না?’ অন্যদিকে, মন্ত্রী নিতিন গাডকরি বলেন, ‘কিছু করার নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকেই দাবি উঠছে, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে অন্তত শিলান্যাসটা করিয়ে রাখতে।’