মোদী ঘনিষ্ঠতার সূত্রে নিজের পকেট ভরে চলেছেন তিনি। বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। কিন্তু তাতেও পিছিয়ে যাননি তিনি। বরং প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য হওয়ার সুবিধা কত, তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন গৌতম আদানি। ভারতে এই মুহূর্তে অন্তত ২৫০০ কোম্পানি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এরা প্রত্যেকেই ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল ঋণ নিয়েছিল। ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলো তাদের বিষয়সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। গুজরাট এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার হস্তক্ষেপ না করলে ২০১৮ সালে একই দশা হত আদানি শিল্পগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি সংস্থার।
রাজ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের এই সুস্পষ্ট নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ২০১৮-র ডিসেম্বরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে গুজরাটের বিজেপি সরকার। এবং তা স্রেফ ‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড’কে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে। কারণ আদানিরা কাঁদুনি গেয়েছিল, গুজরাটে তাদের এত কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে যে লাভ তো হচ্ছেই না, বরং ব্যাঙ্ক ঋণের টাকাও শোধ করা যাচ্ছে না।
গুজরাট উপকূলের মুন্দ্রায় ৪৬২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ২০০০ মেগাওয়াটই যদিও কিনে নেয় রাজ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতর গুজরাট উর্জা বিকাশ নিগম। অর্থাৎ শুধু গুজরাটের লোককে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করা নয়, বিদ্যুৎ কেনার খরচও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল স্রেফ আদানিদের মুখ চেয়ে। এবং তা ঘুরপথে ফের সাধারণ মানুষেরই পকেট কেটেই। গুজরাট উর্জা নিগমের সঙ্গে ২০০৭ সালে চুক্তি সই হয়েছিল আদানিদের।
২০১০ সালে, তখন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ শেষও হয়নি, আদানিরা বলতে শুরু করে, ওই চুক্তি নতুন করে করতে হবে। কারণ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে আদানিরা, তার দাম নাকি বেড়েই চলেছে। কাজেই নতুন চুক্তিতে বিদ্যুতের দর বাড়াতে হবে। এই নিয়ে বিস্তর আইনি বাদানুবাদের পর ২০১৭-র এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টে আদানিদের যুক্তি খারিজ হয়ে যায়। আদালত বলে, কয়লার দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে, এই যুক্তি গ্রহণযােগ্য নয়। কারণ দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলোকে এটা মাথায় রাখতে হয়। সেই ঝুঁকি হিসেবের মধ্যে রেখেই দরপত্র তৈরি হয়।
সুপ্রিম কোর্ট এই প্রসঙ্গে এ মন্তব্যও করে যে চুক্তিপত্রে কোথাও বলা নেই কেবল ইন্দোনেশিয়া থেকেই কয়লা আমদানি করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দামে সেটা কিনতে হবে। অর্থাৎ আমদানি করা কয়লার দাম বেড়ে যাচ্ছে- এটা যে নেহাতই অাদানিদের বাহানা, সে কথাও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এবং দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিল তারা। সেই রায়কেও সরাসরি অগ্রাহ্য করল গুজরাটের বিজেপি সরকার। অর্থাৎ মোদী-স্নেহধন্য অনিল আম্বানিকে যেভাবে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে, গুজরাটে গৌতম আদানির তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকেও একইভাবে বুক দিয়ে আগলে রাখল বিজেপি।