যাঁর প্রশিক্ষণে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড শেষ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল, সেই কিংবদন্তি ম্যানেজার স্যার আলেক্স ফার্গুসন নিজের অসুস্থতা উপেক্ষা করে বুধবার প্যারিসে গিয়েছিলেন ম্যাচ দেখতে ও ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে। পেনাল্টি পেয়ে যেভাবে শেষ আটে উঠল ম্যান ইউ, সেই জয় মনে হয় স্যার আলেক্স ফার্গুসনকেই উৎসর্গ করলেন খেলোয়াড়রা।
প্যারিসের স্টেডিয়ামে তখন বোধহয় পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। ৯৪ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। ‘দ্য রেড ডেভিলস’-এর দিয়েগো দালোতের মারা শট বক্সের মধ্যে সোজা গিয়ে লাগে প্যারিস সাঁ জারমাঁর (পিএসজি) প্রেসনেল কিমপেমবের হাতে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান মাঠের পাশে টিভিতে রিপ্লে দেখতে। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে তিনি ফিরে এসে পেনাল্টি দেন ম্যান ইউকে। পেনাল্টি মারতে আসেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। বয়স মাত্র একুশ হলে কী, র্যাশফোর্ডের মধ্যে স্নায়ুর চাপের ছিঁটেফোঁটাও দেখা যায়নি। অসম্ভব ভাল একটা শট মেরে তিনি পরাজিত করলেন জানলুইজি বুফনকে। এবং অবিশ্বাস্য ভাবে নিজেদের মাঠে ০-২ হারার পরেও ম্যান ইউ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল।
ম্যান ইউয়ের পাওয়া পেনাল্টি নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হল। ভিআইপি বক্সে বসে বুধবার রাতে খেলা দেখেন পিএসজি-র আহত ব্রাজিলীয় তারকা নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র। ম্যাচের পরে তিনি রাগে ফুঁসছিলেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই লজ্জার। ওরা যে চার জনকে ভিএআর-এ রিপ্লে দেখার দায়িত্ব দিয়েছিল তাঁরা ফুটবলের কিছুই বোঝেন না। কোনও ভাবেই ওটা পেনাল্টি ছিল না। কারও পিঠে লাগলে আপনি কোনও ভাবে হ্যান্ডবল দিতে পারেন না।’’ সঙ্গে তিনি একটি অশ্লীল কথাও লিখে ফেলেন। পরিস্থিতি সামলাতে নেমারের হয়ে পিএসজি-র ম্যানেজার থোমাস টুহেল সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেন, ‘‘ও মাঠে ছিল। যেটা বলেছে সেটা অবশ্যই বাড়াবাড়ি। কখনও কখনও বড় ম্যাচের পরে মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। খারাপ কিছু বলে ফেলেও পরে তাই নিজের কথা ফিরিয়ে নেয়। আসলে নেমারের ইচ্ছে ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার। তাই ওর প্রতি আমাদের কঠোর হওয়াটা ঠিক নয়। মাথা গরম করে নিজের স্মার্ট ফোনে দ্রুত কিছু খারাপ কথা লিখে ফেলেছে। ব্যাপারটা এর বেশি কিছু নয়।’’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ম্যান ইউ যেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে গেল। ঘরের মাঠে ০-২ হারের পরেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। অবশ্য ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে ম্যান ইউকে। খেলার ২ মিনিটেই ভুল ব্যাকপাস ধরে ১-০ করে দেন সুযোগসন্ধানী রোমেলু লুকাকু। ৩০ মিনিটে বেলজিয়ামের স্ট্রাইকারের দ্বিতীয় গোলও বুফনের হাত থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে বেরিয়ে আসা বল তাড়া করে। তার আগে ১-১ করেছিলেন পিএসজি-র খুয়ান বের্নাত ভেলাসকো। পিএসজি-ই কোয়ার্টার ফাইনালে যাচ্ছে এমন একটা পরিস্থিতিতে খেলার শেষ লগ্নে পেনাল্টি থেকে ৩-১ করেন র্যাশফোর্ড। সোলসার অবশ্য ম্যাচ বিশ্লেষণ করতে বসে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য না করে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তাঁর ক্লাবের সুখ্যাতি করে যান, ‘‘এটাই আমাদের ক্লাব। এ ভাবেই ইতিহাস গড়ি। আর ফুটবল ঘিরে এমন নাটক চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই বেশি দেখা যায়।’’