রায়গঞ্জ-মুর্শিদাবাদ না পেলে বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাবে না তারা, আগেই এ কথা জানিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। এমনকি এ ব্যাপারে আলিমুদ্দিনকে সময়ও বেঁধে দিয়েছিল বিধানভবন। ফলে বাংলায় বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর ঘিরে তৈরি হয়েছে একরাশ অনিশ্চয়তা। জট কাটল না কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বাড়িতেও। রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদের জট নয়াদিল্লীতে বসেও ছাড়ানো গেল না। প্রয়োজনে ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াই হোক— রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পরে এমনই মন্তব্যই করেছেন বাংলার কংগ্রেস নেতারা। উল্টো দিকে সিপিএম-ও আগের অবস্থানেই অনড়।
গত সপ্তাহেই প্রদেশের এক বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জ আসন দুটি ছাড়া সম্ভব নয়। পুরুলিয়া আসনেও কংগ্রেসই লড়বে। এরপর যদি সিপিএম তথা বামেরা আসন সমঝোতা করে তাহলে তা রবিবারের মধ্যে জানাক। এরপর বাংলায় বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার জন্য সোমেনকে দিল্লীতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাহুল। রাহুলের বাড়িতেই বুধবার বৈঠকটি হয়। সোমেন ছাড়াও সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মালাকার ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন।
রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই রাহুল স্থির করতে চাইছেন, কোন ফর্মুলায় সমঝোতায় যাওয়া যেতে পারে বামেদের সঙ্গে। কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের খবর, সোমেন-প্রদীপ-শঙ্কররা এ দিন রাহুলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসন কোনও ভাবেই সিপিএম-কে ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে সমঝোতার কোনও ফর্মুলা এ দিনের বৈঠক থেকে উঠে আসেনি। কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরনোর পরে সোমেন বলেন, ‘দুটো আসন নিয়েই আটকে রয়েছে গোটা বিষয়টা— রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ।’
সোমেনের ব্যাখ্যা, ‘রায়গঞ্জে আমাদের প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি। ওই কেন্দ্রের সঙ্গে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নামটা জড়িত। তাই রায়গঞ্জ নিয়ে আমাদের আলাদা একটা আবেগ রয়েছে। ওই কেন্দ্র সিপিএমকে ছাড়া সম্ভব নয়।’’ আর মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গে সোমেন বলেন, ‘‘ওখানে তৃণমূল এবং সিপিএম ছেড়ে দলে দলে লোক কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। ওখানে সিপিএমের জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ওই আসন সিপিএম-কে ছাড়তে গেলে আসলে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মুখে অবশ্য বলছেন, রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার প্রশ্নই নেই। এবং ওই দুই আসনে সমঝোতা না হলে সমঝোতা নিয়ে ভাবাও কঠিন। তবে তিনি ভাল মতই বুঝতে পারছেন যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। কারণ এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেরা একা লড়লে যে তাঁদের সাইনবোর্ড ভিজিটিং কার্ডের আকার নেবে, তা জানতে বাকি নেই কারও। তাই যথাসম্ভব সুর নরমই রেখেছেন তিনি।